করোনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ইত্যাদি ঝুঁকির মুখে ছিলই, এবার এতে নয়া সংযোজন হাড়ও। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা চিকিৎসার সময় স্টেরয়েডের অতিরিক্ত ব্যবহার হাড় দুর্বল করে দিচ্ছে, কমছে হাড়ের ঘনত্ব। এর ফলে অস্টিওপোরোসিসের আশঙ্কাও ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। এর জন্য করোনা থেকে সেড়ে ওঠার পর হাড়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য একটি বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট করিয়ে দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অ্যাপোলো স্পেকট্রা হসপিটালের অর্থোপেডিক সার্জেন ড: আনন্দ জাদভ জানান যে, ‘কোভিডের কারণে ভাইরাল ইনফেকশন হয়। স্টেরয়েডের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং অস্টিওপোরোসিস দেখা দেয়। কোভিড-১৯ থেকে সেড়ে ওঠার পর ৬ মাস থেকে ১ বছরে এই সমস্যা দেখা যায়। তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সমস্যা বর্তমান থাকে। তাই করোনা সংক্রমণের পর বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত।’
কেমোথেরাপি, অস্টিওপোরোসিস, করোনা চিকিৎসার সময় স্টেরয়েডের ব্যবহার, অস্টিওপোরোসিসের পারিবারিক ইতিহাস, ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটির অভাব, ধূমপান হাড়ের ভঙ্গুরতা ও দুর্বলতার জন্য দায়ী হতে পারে। তাই হাড় মজবুত রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রণালী মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অ্যাপোলো ক্লিনিকের অর্থোপেডিক সার্জেন ড: মায়াঙ্ক পাঠক জানিয়েছেন, তাঁরা কমবয়সি (১৮-৪০)-দের মধ্যে লো বোন মাস (low bone mass)-এর কেসে বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করছেন। কম পরিমাণে সূর্য রশ্মির সংস্পর্শে আসা এর অন্যতম কারণ। বাড়িতে বসে কাজ করা, নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন, স্ট্রেস, মদ্যপান ও ধূমপানকেও এর জন্য দায়ী করেছেন তিনি।
হাড়ের দুর্বলতা রোধের জন্য জীবনযাপন প্রণালীতে কী কী পরিবর্তন করবেন—
১. এক্সারসাইজের ফলে হাড়ের মজবুতি ফিরে পাওয়া যায়। হাঁটাচলা, হাইকিং বা ডান্সিং করুন। হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য হালকা ওজন বা এলাস্টিক ব্যান্ডের সাহায্যে এক্সারসাইজ করুন। কোনও বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করুন।
২. দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য, সবুজ শাকসবজি এবং সোয়াবিনের মাধ্যমে ক্যালশিয়ামের দৈনিক যোগান পূর্ণ করুন। এ ছাড়াও সার্ডিন, সালমন ও ডিমের মতো ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খান।
৩. সকালে সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে আসুন। চিকিৎসকের পরামর্শের পর ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি এবং অ্যান্টি অস্টিওপোরোসিস ওষুধ গ্রহণ করুন।
৪. উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন ডায়েট এড়িয়ে চলুন। জাঙ্ক ও প্রক্রিয়াজাত খাবার-দাবার খেলে হাড়ের দুর্বলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অতি অবশ্যই গ্রহণ করবেন)।