বিশ্বের অনেক জায়গায় মানুষ রোগ নিরাময়ের লক্ষ্যে মূত্র পান করেন, ত্বক সুন্দর করতে গায়ে মাখেন৷ অথচ এমন বিশ্বাসের পক্ষে কোনও বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই৷
মানুষের প্রস্রাবের প্রায় ৯৫ শতাংশই জল। বাকিটা ইউরিয়া, লবণ, হরমোন ও রং৷ সবই শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য৷ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর থেকে গড়ে প্রতিদান প্রায় দেড় লিটার মূত্র বের হয়৷ তবে সব মূত্র শুধু টয়লেটেই গিয়ে পড়ে না৷ কেউ কেউ সেই তরল জমা করে রোগ নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে পান করেন৷ অনেকে আবার সেই মূত্র ত্বকে মাখেন, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে পেশির মধ্যে চালান করেন অথবা কান ও চোখে মূত্রের বিন্দু ঢুকিয়ে দেন৷ ‘সেলফ ইউরিন থেরাপি' গোটা বিশ্বেই পরিচিত৷
ইন্টারনেটেও ‘সেলফ ইউরিন থিয়োরি' বেশ জনপ্রিয়৷ এমন ভিডিয়োর দর্শক সংখ্যা কম নয়৷ সবক্ষেত্রেই একই দাবি করা হয়৷ মূত্র নাকি রোগ নিরাময় করে, সুস্থ-সবল থাকতে সহায়তা করে এবং ত্বকের জন্যও ভালো৷ ‘সেলফ ইউরিন থিয়োরি' সত্যি কতটা কার্যকর? মূত্র কি সত্যি রোগ নিরাময় করতে পারে?
ত্বক রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে উভে শ্ভিশটেনব্যার্গ বলেন, ‘মূত্র রোগ নিরাময় করে, এমন দাবির স্বপক্ষে কোনও তথ্য বা ইঙ্গিত আমাদের কাছে নেই৷ প্রমাণ তো একেবারেই নেই৷' জেনারেল প্র্যাক্টিশনার ইলকার এয়দিনও এ বিষয়ে একমত৷ তিনি বলেন, ‘মূত্র আসলে শরীরের এক তরল বর্জ্য ছাড়া আর কিছুই নয়৷ অর্থাৎ আমরা সেগুলি ত্যাগ করতে চাই, তার মধ্যে সে সব রয়েছে৷ বিশেষ করে প্রোটিন মেটাবোলিজমের মতো প্রক্রিয়ায় ভেঙে যাওয়া অনেক পদার্থ৷ অর্থাৎ লবণ ও মিনারেল৷ মোটকথা এমন কোনও গবেষণা বা স্পষ্ট তথ্য নেই, যা কোনও রকম উপকারের প্রমাণ দিতে পারে৷ এটা প্রাচীনকালের এমন এক বিশ্বাস, যা বহু শতাব্দী ধরে টিকে রয়েছে৷ কিন্তু এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই৷'
অনেক মানুষ নিজের ত্বক আরও সুন্দর ও মসৃণ করার লক্ষ্যে মূত্র ব্যবহার করেন৷ শুনলে যুক্তিপূর্ণ মনে হতে পারে, কারণ অনেক ক্রিমের মধ্যেও তো ইউরিয়া থাকে৷ মূত্র কি সত্যি ত্বক আরেও সুন্দর করে তোলে? ইলকার বলেন, ‘এমন কিছু পণ্য রয়েছে, যেগুলি ক্রিম বা মলম হিসেবে প্রক্রিয়াজাত করা ইউরিয়া কাজে লাগায়৷ চুলকানি ও প্রদাহ কমাতে সেগুলি নাকি সহায়তা করে৷ মানুষের উপকার হয়েছে, এমন কিছু রিপোর্ট রয়েছে৷'
ত্বক রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে উভে শ্ভিশটেনব্যার্গ বলেন, ‘ইউরিয়া ক্রিম বাইরে থেকে ত্বকের উপর লাগালে ইউরিয়ার অণু ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে৷ সঙ্গের জল সেই অংশে জাঁকিয়ে বসে ত্বকের ইলাস্টিসিটি নিশ্চিত করে৷ সেটা অবশ্যই কাম্য৷ মূত্রের মধ্যে যে ইউরিয়া থাকে, রাসায়নিক মানদণ্ডে সেটি হুবহু ক্রিমের ইউরিয়ার মতো৷ কিন্তু প্রথমত, সেটি ত্বকে লাগালে তার পরিমাণ জানা নেই৷ দ্বিতীয়ত ত্বকের মধ্যে সেইসঙ্গে অন্য কত কী যে প্রবেশ করছে, তাও বলা যায় না৷'
মূত্র দিয়ে যে রোগ নিরাময় করা যায় না, সেটা স্পষ্ট৷ ফলে মূত্র পান করার পক্ষেও কোনও যুক্তি নেই৷ এমন অনেক কিছু আছে, যার স্বাদ অনেক ভালো, আরও স্বাস্থ্যকর এবং ঘৃণার কারণ নয়৷ যেমন হার্বাল টি৷
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)