দীর্ঘ দুই বছর পর শিশুরা আবার স্কুলে যাচ্ছে। করোনা তার ভয়াল রূপ দেখানো শুরু করতেই আস্ত স্কুলটাই বাড়ি, থুড়ি ফোনের মধ্যে চলে এসেছিল। শিশুরা দীর্ঘ সময় ফোন দেখেই, পড়াশোনা করে, কাটাত। কিন্তু এখন যখন তারা এতদিন পর স্কুলে ফিরল আমরা কি তাদের চোখের পরীক্ষা করেছি? এতদিন একটানা ফোন দেখার কতটা কুপ্রভাব তাদের চোখে পড়ল সেটা যাচাই করেছি? হয়তো অনেকেই করেননি। কিন্তু এটা জরুরি।
দীর্ঘক্ষণ ফোন বা ল্যাপটপ দেখার একটা খারাপ প্রভাব তো পড়েই চোখে। দৃষ্টিশক্তি কমে আসে। আর দৃষ্টিশক্তি কমা মানে, তার কুপ্রভাব পড়াশোনায় পড়া। আসুন দেখে নেওয়া যাক এই দু বছর একটানা ফোন বা ল্যাপটপ দেখার ফলে কোন কোন সমস্যা দেখা যাচ্ছে শিশুদের মধ্যে।
ফোন দেখার কুপ্রভাব
১২ বছরের নিচের বাচ্চাদের মধ্যে চোখের অ্যালার্জি সহ দৃষ্টিশক্তি কমতে দেখা গিয়েছে। মাত্র ৫০ শতাংশ বাবা মাই তাঁদের সন্তানদের নিয়মিত চোখ দেখান, এবং যত্ন নেন বলেই একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে। ৬৮ শতাংশের কাছে তাঁদের সন্তানদের দৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে, এবং মাত্র ৪৮ শতাংশ নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করান তাঁদের সন্তানদের। যার ফলে ভারতে শিশুদের মধ্যে দৃষ্টি কমে যাওয়ার সমস্যা দ্রুত হারে বাড়ছে। ভারতের ২৩-৩০ শতাংশ শিশুরই দৃষ্টিশক্তি দুর্বল, এর মধ্যে অধিকাংশই কোনও না কোনও শহরের বাসিন্দা, যারা খুব কম সময় বাইরে খেলাধুলা করে, এবং অধিকাংশ সময়ই ফোন অথবা অন্যান্য গ্যাজেটস নিয়ে কাটায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘক্ষণ ফোন, টিভি, ল্যাপটপ দেখার কারণেই শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা আরও বেড়েছে করোনাকালে, এই সময়টায় তাদের স্ক্রিনটাইম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এবং কারও কারও ক্ষেত্রে তো সেটা একটা নেশায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক আলোর থেকে বাচ্চারা এখন বেশির ভাগ সময় কৃত্রিম আলোতেই কাটায়, সেটাও দৃষ্টিশক্তির উপর কুপ্রভাব ফেলে। ভারতীয় বাবা মায়েদের মতে তাঁদের সন্তানরা দিনের ১৪ ঘণ্টাই ঘরের মধ্যে কাটায়। যার কারণে এই কৃত্রিম আলো তাদের চোখের সমস্যা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
এটা দেখা গিয়েছে যে, যে সমস্ত শিশুদের দৃষ্টিশক্তি খারাপ তাদের অধিকাংশের অ্যাকাডেমিক পারফরমেন্সও বেশ খারাপ হয়ে থাকে। খারাপ দৃষ্টিশক্তি আসলে সরাসরি পড়াশোনার উপর প্রভাব ফেলে। তাই নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা এবং যত্ন নেওয়া ভীষণ জরুরি।
কখন শিশুদের দৃষ্টি পরীক্ষা করা উচিত?
শিশুদের প্রথম দৃষ্টি পরীক্ষা করা উচিত তাদের তিন বছর বয়সে, এরপর আবার ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হওয়ার আগে একবার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এরপর থেকে প্রতি বছর একবার করে নিয়মিত চোখ দেখানো উচিত শিশুদের। এতে রুটিন চেকাপ হয়ে যাবে তাদের।
বাবা মায়েদের এই বিষয়ে কী কী মনে রাখা উচিত দেখে নিন।
১. লক্ষণগুলো চিনুন: শুধু স্বাস্থ্য নয়, সন্তানের দৃষ্টিশক্তির উপরেও সমান নজর দিন। যদি দেখেন আপনার সন্তান এক চোখ ঢেকে কিছু দেখা, বা পড়ার চেষ্টা করছে সতর্ক হন। একই সঙ্গে যদি খুব কাছে নিয়ে কিছু পড়ে, ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে, মাথা ব্যথার কথা বারবার বলে তাহলে আর দেরি না করে দ্রুত চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান সন্তানকে।
২. আপনার সন্তান কীভাবে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করছে দেখুন: একটানা সন্তানকে টিভি বা ফোন দেখতে দেবেন না। মাঝে মাঝে কুড়ি মিনিটের ব্রেক নিতে বলুন। এটা দরকারি। একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ চুলকাতে পারে, লাল হয়ে যেতে করে, এমনকী দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।
৩. সঠিক জিনিস ব্যবহার করতে বলুন সন্তানকে: বাইরে বেরোলে সন্তান যেন অবশ্যই সানগ্লাস পরে, অথবা গেম খেললে যেন সঠিক চশমা পরেই গেম খেলে সেই দিকে নজর দিন।