মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগত, কোনও দেশের ভিসা তৈরি করতে। ভুয়ো ভিসা যদিও। তবে, খালি চোখে একবার দেখলে, ভিসাটি আসল না নকল, তা ধরা খুব একটা সহজ নয়। ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর থানা পুলিশ, জাল ভিসা তৈরির অভিযোগে একটি ধুরন্ধর গ্যাংকে হাতেনাতে ধরেছে। গ্রেফতার হয়েছেন সাত অভিযুক্ত। এই চক্রের প্রধান অভিযুক্ত ২০ বছর ধরে ব্যানার তৈরির কাজ করে আসছিলেন। আর গত পাঁচ বছর ধরে, প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩০টি ভিসা প্রস্তুত করেছেন অভিযুক্ত।
এই অভিযুক্তরা হলেন তিলক নগরের মনোজ মঙ্গা, নিলোথি গ্রামের বলবীর সিং, কর্নাল (হরিয়ানার) আসান্ধের নবীন রানা, নিলোখেদি গ্রামের জাসবিন্দর সিং ওরফে মিন্টি, জিন্দের সফিডন গ্রামের আসিফ আলি, কুরুক্ষেত্রের দিওয়ানা গ্রামের সন্দীপ এবং নেপালের কাঠমান্ডুর শিব গৌতম।
এইভাবেই ধরা পড়েন অভিযুক্তরা
আইজিআই বিমানবন্দর থানার ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ ঊষা রঙ্গনানি জানিয়েছেন, ২ সেপ্টেম্বর সন্দীপ ইতালি যাওয়ার জন্য জাল সুইডিশ ভিসা নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন। সেই সময় ইমিগ্রেশনে তাঁর কাগজপত্র চেক করা হলে, পাসপোর্টে একটি জাল ভিসা পাওয়া যায়। এরপরেই আইজিআই বিমানবন্দর থানা একটি এফআইআর নথিভুক্ত করে, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত জানায়, আসিফ আলী তাঁকে ১০ লক্ষ টাকায় ইতালি পাঠানোর কথা দিয়েছিলেন। এইভাবে তাঁদের গ্রামের অনেকেই বিদেশ গিয়েছেন। এছাড়াও আসিফের সহযোগী নবীন রানা এবং শিব গৌতমের সহায়তায় তিনি রোমে যাওয়ারও টিকিট ও ভিসার ব্যবস্থা করেছিলেন।
এ তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ, আসিফ আলী, নবীন রানা ও শিব গৌতমকে আটক করে। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে এজেন্ট বলবীর সিং এবং জাসবিন্দর সিংকে ধরা হয়। তাঁরা আবার জানান যে ভুয়ো ভিসা তৈরি করার কাজ করেন মনোজ মঙ্গা। এই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে তাঁর তিলক নগরের অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মনোজ জানান, তাঁর ডেস্কটপ পাবলিশিং-এ ডিপ্লোমা রয়েছে এবং কোরেল ড্র, ফটোশপ এবং গ্রাফিক ডিজাইনিংয়েও তিনি খুব ভালো।
কীভাবে শুরু হয় এই জাল ব্যবসা
বিগত ২০ বছর ধরে, তিনি ব্যানার ও পোস্টার তৈরি করে আসছেন। পাঁচ বছর আগে, তিনি জয়দীপ সিং নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয় তাঁর, সিং-ই নাকি তাঁকে জাল ভিসা তৈরি করতে বলেছিলেন। জয়দীপই প্ৰথমে মনোজকে ডাই, রাবার স্ট্যাম্প, ভিসা স্টিকারের মতো জাল ভিসা তৈরির যন্ত্রপাতি দিয়েছিলেন। এরপর বাড়িতেই ভিসা তৈরির কাজ শুরু করেন মনোজ। প্রতি মাসে ২০ থেকে ৫০টি নকল ভিসা তৈরি করতেন। আগে জয়দীপ সিং তাঁকে জাল ভিসার অর্ডার দিতেন। পরে মনোজ অন্য এজেন্টদের কাছ থেকেও অর্ডার পেতে শুরু করেন। এইভাবেই রমরমিয়ে দিব্যি চলছিল ব্যবসা।
পুলিশের মতে, এই গ্যাং প্রতি মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৬০টি জাল ভিসা তৈরি করত। মাত্র ২০ মিনিটেই একটি ভিসা তৈরি করতে পারত। প্রতিটি জাল ভিসা ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হত। এইভাবে, পাঁচ বছর ধরে ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ ভিসা বানিয়ে, ৩০০ কোটি আয় করেছেন তাঁরা। টেলিগ্রাম, এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে, বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন অভিযুক্তরা। এইভাবেই তাঁরা বিদেশ থেকেও জাল ভিসার অর্ডার পেতেন।
আরও পড়ুন: (Bill Biggart: ৯/১১ হামলা কভার করতে গিয়ে হারিয়েছিলেন প্রাণ, ভাইরাল সাংবাদিকের শেষ ছবি)
অভিযুক্তদের কাছ থেকে কী কী উদ্ধার করা হয়েছে
আসামিদের কাছ থেকে ৩০টি ভুয়ো ভিসা স্টিকার, বিভিন্ন দেশের ২৩টি রাবার স্ট্যাম্প, তিনটি জাল পিআর কার্ড, নেপালের ১৪টি পাসপোর্ট, ভারতের দু' টি পাসপোর্ট, ডাই মেশিন সহ ভিসা ও পাসপোর্ট তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে, যেমন ডাই মেশিন, প্রিন্টার, লেমিনেট শিট, ল্যাপটপ, ইউভি মেশিন সহ আরও অনেক কিছু উদ্ধার করা হয়েছে।