বাংলাদেশ সম্প্রতি ৭ কোটি বছর আগের এক দারুন নিদর্শন পেল। একটি ডাইনোসরের জীবাশ্ম। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই জীবাশ্মগুলো একজনের ড্রয়িং রুমের শোকেসে শোপিস হিসেবে শোভা পাচ্ছিল। এবার তাঁর বাড়ি থেকে এই জীবাশ্মগুলোর স্থান হল জাদুঘরের শোকেস। সেখানেই থাকবে এই ডাইনোসরের জীবাশ্মগুলো। বাংলাদেশের শাহবাগে যে জাতীয় জাদুঘর আছে সেখানে রাখা হয়েছে এই ৭ কোটি বছর পুরোনো ফসিলগুলোকে। খুব শীঘ্রই সর্বসাধারণের দেখার জন্য এগুলোকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশে গাছ, উদ্ভিদ সহ জলজ প্রাণীর জীবাশ্ম সংরক্ষিত করে রাখা আছে। কিন্তু ডাইনোসরের জীবাশ্ম? এই প্রথমবার। বাংলাদেশে যে ডাইনোসরের জীবাশ্ম আছে সেটাই জানা গেল প্রথমবার। প্রায় চল্লিশ বছর আগে পাবনা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হাফিজা খাতুন কানাডা থেকে নিজের সঙ্গে করে আটটি ফসিল এনেছিলেন। অবশেষে তিনি গত বছর এই আটটি ফসিলের মধ্যে চারটে দেন জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে আর বাকি চারটে দেন বিজ্ঞান জাদুঘরের কর্তৃপক্ষের কাছে।
এরপর বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে পাঠায় এই ফসিলগুলো। জীবাশ্মগুলোর পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর হাফিজা খাতুনকে একটি ধন্যবাদপত্র দেওয়া হয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের তরফে। বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগের ডেপুটি কিপার শওকত ইমাম জানিয়েছেন তাঁরা গত বছরই এই ফসিলগুলোকে হাতে পেয়েছেন। বর্তমানে প্রদর্শনের জন্য এগুলোকে তৈরি করা হচ্ছে বলেই তিনি জানিয়েছেন। কাজ মিটে গেলেই সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে যে পরীক্ষা করা হয়েছিল সেখান থেকে জানা গিয়েছে এই ফসিলগুলোর বয়স ৭ কোটি বছর।
হাফিজা খাতুন যখন ১৯৮৩ সালে কানাডায় পড়তে যান তখন তিনি একটি গবেষণা দলের সঙ্গে মিলে ডাইনোসরের জীবাশ্ম সংগ্রহের কাজে যান। সেখান থেকেই তিনি এই আটটি ফসিল সংগ্রহ করেন। তিনি যখন ১৯৮৪ সালে দেশে ফেরেন তখন তিনি এগুলোকে সঙ্গে করে নিয়েই ফেরেন। এই ফসিল সংগ্রহ করার জন্য তাঁকে কোনও রকম আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি বলেই জানিয়েছেন হাফিজা খাতুন। দেশে ফেরার পর তিনি এগুলো তাঁর ঘরে সাজিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর ছাত্রদের দেখাতেন। অনেকে আবার তাঁর বাড়ি এসে এগুলো দেখে কৌতূহল প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন হাফিজা খাতুন।
দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই ৭কোটি বছর পুরোনো জীবাশ্মগুলোকে নিজের কাছে সযত্নে রাখার পর তাঁর মনে হয়েছে এবার এগুলো দেশের উন্নতিসাধনের কাজে দিয়ে দেওয়া উচিত। এগুলো দেশের সম্পদ বলেই মনে করেন তিনি। তাই তখন তিনি এই ফসিলগুলোকে দুই জাদুঘরের কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়ে দেন।