আফ্রিকার এক তরুণ পুরোনো, নষ্ট হয়ে যাওয়া স্নিকার দিয়েই ব্যবসা জমিয়ে তুলেছেন৷ হাল ফ্যাশনের সেই জুতোর চাহিদাও কম নয়৷
স্নিকারকে ঘিরে ফ্যাশন জগতে বিশাল উন্মাদনা দেখা যায়৷ সেগুলির দামও আকাশছোঁয়া৷ তবে কেনিয়ার ডেনিস চেগে স্নিকার সবার নাগালে আনতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত৷ তিনি কীভাবে বাতিল জুতো কাজে লাগিয়ে সফল ‘ট্র্যাশন' ব্যবসা চালাচ্ছেন, সেটা জানার আগে স্নিকার নিয়ে উন্মাদনার বিষয়টি বুঝতে হবে৷ ডেনিস মনে করেন, ‘মানুষ যেটা বোঝে না, সেটা হলো স্নিকার শুধু কাজের জিনিস নয়, এর সাংস্কৃতিক গুরুত্বও রয়েছে।’
কিন্তু ‘স্নিকার কালচার' বিষয়টি আসলে কী? ভেঙে ফেলা সত্ত্বেও ডেনিসের স্নিকারের এত চাহিদা কেন? ডেনিস চেগে বলেন, ‘স্নিকারগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয়, কারণ প্রথমত সবাই কিছু একটার অংশ হতে চায়৷ আর আমাদের চেহারা তুলে ধরতে স্নিকারের জগত সত্যি সেরা হয়ে উঠেছে৷ দ্বিতীয়ত সেগুলি আমাদের অনন্য অনুভূতি দেয়৷ যেমন স্নিকার পরে হাঁটলে আমি নিজেকে ‘কুল' মনে করি, ভালো বোধ করি৷ মনে ভালো জামাকাপড় পরেছি৷ আমার মতে, সেটাই এমন জনপ্রিয়তার কারণ৷ আমি জুতোর মধ্যে অনেক পরিবর্তন আনি৷ অ্যাসেটোন জুতোর সুরক্ষার স্তর সরিয়ে দেয়৷ সেই কাজ করার পর আমরা জুোতার উপর একটা আর্টের স্কেচ করি৷ স্কেচের প্রয়োজন না হলে আমরা জুতোর রং বদলাতে বা সেটির মধ্যে নতুন অভিব্যক্তি আনতে হাতে করেই আর্ট পেইন্টিং করি।’
২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী স্নিকারের বাজারে ব্যবসার অংক ছিল আনুমানিক ৭,২২০ কোটি ডলার৷ উচ্চ মূল্যের ‘লিমিটেড এডিশন' থেকে শুরু করে বিশ্ব বাজারের জন্য বড় আকারে তৈরি সস্তার স্নিকারও পাওয়া যায়৷ স্নিকারের ব্যবসায় নিজেকে উৎসর্গ করতে ডেনিস কোথা থেকে প্রেরণা পেয়েছিলেন? ডেনিস বলেন, ‘আমি কৌতূহলের বশেই স্নিকারে রদবদলের কাজ শুরু করি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে লক্ষ্য করেছিলাম, যে অনেক মানুষ স্নিকারের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরার চেষ্টা করছে৷ তবে বেশিরভাগ স্নিকারই একই রকম দেখতে ছিল৷ সেই একঘেয়ে ডিজাইন দেখে আমার মনে হলো, আমি কীভাবে পরিবর্তন আনতে পারি?’
প্রতি বছর আনুমানিক প্রায় ৩০ কোটি স্নিকার ফেলে দেওয়া হয়৷ নাইরোবি শহরে দুই থেকে আড়াই লাখ টন বর্জ্য সৃষ্টি হয়৷ স্নিকার কালচার ও স্নিকারের কারণে বর্জ্য ইতোমধ্যেই বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে৷ মাপ্স ওয়ার্ল্ড কাস্টমস স্নিকার্সের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ডেনিস চেগে জানান, ‘নতুন করে স্নিকারগুলির আয়ু বাড়ানো আমার আইডিয়ার অংশ ছিল৷ এর প্রধান কারণ হলো স্নিকারগুলি বেশ দামি৷ কখনো কিছুটা নষ্ট বা খারাপ হয়ে যেতে পারে৷ আমার মনে হলো, এমন জুতো আমার কাছে আনলে আমি তার মধ্যে নতুন অভিব্যক্তি যোগ করতে পারি৷ তখন আপনার অন্য অনুভূতি হবে।’
ডেনিস জুতোর মধ্যে ঠিক কোন ধরনের বিশেষ পরিবর্তন আনেন? তিনি বলেন, ‘স্নিকার কাস্টমাইজেশনের ক্ষেত্রে আমরা এক প্রক্রিয়া অনুসরণ করি৷ প্রথমত জুতো চামড়া দিয়ে তৈরি হতে হবে৷ না হলে কমপক্ষে এমন উপকরণ চাই, যা আমাদের দেওয়া রং ধরে রাখতে পারে৷ কারণ আমরা লেদার অ্যাক্রিলিক রং ব্যবহার করি৷ গোটা জুতোর রং কালো হয়ে ওঠার কথা, কারণ আমি কালো ও সোনালি থিম দিতে চাই, যাকে গোল্ডেন স্প্ল্যাশ বলা যায়৷ এবার কঠিন কাজের শেষে এটাই হলো চুড়ান্ত পণ্য৷ যেমনটা দেখছেন, পরিষ্কারের পর পুরোপুরি প্রস্তুত৷ চকমকে এই জুতো পায়ে পরলেই হবে।’
এভাবে ডেনিস মানুষের পুরানো বাতিল জুতো ফ্যাশনদূরস্ত করে তোলেন৷
সোয়াজি ডানিয়েল/এসবি
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)