হালের এক DNA পরীক্ষা চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। দেখা গিয়েছে, এক শিশুর মা আসলে তার মামা। এতটাই অবাক হয়েছেন বিজ্ঞানীরা যে প্রথমে ভেবেছিলেন, গবেষণাগারে নিশ্চয়ই কোনও নমুনা এদিক ওদিক হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, আসলে বিষয়টি ঠিক তাই।
কলোম্বিয়ার Institute of Genetics-এর অধ্যাপক হুয়ান ইউনিসের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত বহু শিশুর DNA হয়। মূলত গবেষণা এবং পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য গবেষকরা এই কাজটি করেন। মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস ধরতেও এই পরীক্ষাগুলি কাজে লাগানো হয়। কিন্তু তেমনই এক পরীক্ষা থেকে যে এমন তথ্য উঠে আসবে, সে বিষয়ে ভাবতে পারেননি তাঁরা।
কী দেখা গিয়েছে পরীক্ষায়?
- প্রথমে দেখা গিয়েছে, তার মা বলে যার পরিচয় দেওয়া হয়েছে, তিনি আসলে তার মা নন। এতে বিজ্ঞানীরা প্রাথমিকভাবে অবাক হন।
- এর পরে বাবার DNA-র নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, সেই বাবাও শিশুটির বাবা নয়।
- এর পরে বিজ্ঞানীরা শিশুটির মায়ের ক্রোমোজোম পরীক্ষা করেন। তাতে দেখা যায়, সেটি পুরুষের ক্রোমোজোম।
- বিজ্ঞানীরা এতটাই অবাক হন, আবার সব নমুনা পরীক্ষা করতে বসেন। তাতে দেখা যায়, শিশুটির শরীরে বাবা হিসাবে যে DNA রয়েছে, সেটি তার মায়ের।
এর পরে শিশুটির মাকে বাদ দিয়ে DNA পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, তার বাবার সঙ্গে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে। এবং সেই পুরুষটি এই শিশুর বায়োলজিক্যাল বাবা, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বাবার সঙ্গে সন্তানের ক্রোমোজোম-গত যে সাযুজ্য থাকে, তা এক্ষেত্রে অনুপস্থিত।
কেন এমন হয়েছে?
এবার আসা যাক, কেন এই ঘটনাটি ঘটেছে, তার ব্যাখ্যায়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, বিজ্ঞানীরা যা বলেছেন, তার অর্থ, সাধারণত একটি ডিম্বানুর সঙ্গে একটি শুক্রাণুর মিলনে সন্তান তৈরি হয়। শিশুটির মায়ের জন্মের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এক্ষেত্রে চারটি ডিম্বাণুর সঙ্গে একটি শুক্রাণুর একসঙ্গে মিলন হয়েছিল। এর ফলে শিশুটির মা একজন প্রাকৃতিক ‘কাইমেরা’।
কী এই কাইমেরা (Chimera)?
গর্ভে একেবারে প্রথম অবস্থায় যমজ সন্তান তৈরি হওয়ার পরে যদি একটি সন্তান অন্যটির সঙ্গে মিশে যায়, তাকে কাইমেরা বলে। শিশুটির মায়ের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তা হল, গর্ভে যমজ সন্তানের ছেলেটি মেয়ের সন্তানের মধ্যে মিশে গিয়েছে। তাই পরবর্তীকালে শারীরিকভাবে নারী হয়ে জন্মালেও তার শরীরে পুরুষের ক্রোমোজোমের গঠনই থেকে গিয়েছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত ২০ জন কাইমেরার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, এমন আরও অনেকে আছেন। DNA পরীক্ষার হার বাড়লে ভবিষ্যতে আরও এমন ঘটনার উদাহরণ পাওয়া যাবে।