রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর। হিসেব মতে একটি ছুটির দিন। আলসেমি করে বেলা পর্যন্ত পড়ে পড়ে ঘুমানোর পরিকল্পনা থাকে অধিকাংশ বাঙালির। কিন্তু এই দিনটি বাকি রবিবারগুলোর থেকে যে অনেকটা আলাদা। আজ মহালয়া। সকলেই ভোরবেলা চারটে নাগাদ অ্যালার্ম দিয়ে রেখে ছিল গতকাল। তারপর অ্যালার্ম বাজতেই সকাল সকাল উঠেই রেডিও টিউন করে মহিষাসুরমর্দিনী চালিয়ে ফেলা। এই দিনটিতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে অনুষ্ঠানটি না শুনলে দুর্গাপুজো শুরু হয় না। এই অনুষ্ঠানই যেন নিজের সঙ্গে করে দুর্গাপুজোর আমেজ বয়ে আনে। কীভাবে যে একটা স্রেফ অনুষ্ঠান একটা গোটা জাতির ইমোশন, নস্টালজিয়া সহ অনেক কিছু হয়ে উঠল সেটা কেউই বলতে পারবে না। তবে সবাই এটুকু জানে দুর্গাপুজো, মহালয়া এগুলো সবটাই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ আর রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী শোনা ছাড়া একদম অসম্পূর্ণ।
আর ঠিক এই কারণেই খোদ উত্তম কুমারকে হার মানতে হয়েছিল বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে। কী ঘটেছিল জানেন?
১৯৭৬ সাল। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তখন একজনই সুপার স্টার, তথা মুকুট বিহীন সম্রাট! আর তিনি হলেন উত্তম কুমার। বয়স ৫০ কোঠা পেরিয়ে গেলেও তিনি তখনও খ্যাতির মাঝ গগনে। আর সেই বছরই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের বদলে চণ্ডীপাঠ করেছিলেন উত্তম কুমার। কিন্তু যে নায়কের অভিনয় গোটা বাঙালি জাতি মুগ্ধ ছিল সেই নায়কের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী শুনে রেগে আগুন হয়ে যায় বাঙালিরা।
সেই বছর মহিষাসুরমর্দিনী বদলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল 'দেবিং দুর্গতিহারিণীম'। একে একে বহু অভিযোগ এসে জমা হতে থাকে বেতার অফিসে। বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কাছেও জমা হয় একাধিক অভিযোগ। আকাশবাণীর সামনে জড়ো হয়েছিল বহু মানুষ। কেন জানেন? কারণ ততদিনে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল বাঙালি। তাঁদের কাছে মহিষাসুরমর্দিনী এবং বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ ছাড়া পুজোটাই অসম্পূর্ণ! ফলে গণ্ডগোল দেখে এই অনুষ্ঠানটিকে সেই বছর আবার চালাতে হয়েছিল।
তবে এক্ষেত্রে একটা বলা উচিত, মহানায়ক কিন্তু এই দায়িত্ব নিতে প্রথমে বেশ ভয়ই পেয়েছিলেন। প্রথম দিকে রাজী হতে চাননি। কিন্তু পরে মত বদলান। হেমন্তে মুখোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠানের সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা করা হয়নি আর এই ঘটনা আকাশবাণীকে দিয়েছিল এক চরম শিক্ষা। তারপর থেকে তাঁদের আর ভুল হয়নি। প্রতি বছর এরপর থেকে নিয়ম করে মহালয়ার ভরে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার জন্য ঘুম ভেঙেছে বাঙালির।