বিগত এক মাস ধরে আর জি কর কাণ্ডে বিচার চেয়ে কখনও রাস্তায় লেখা হয়েছে We Want Justice, কখনও আবার নির্যাতিতার রক্তচক্ষু আঁকা হয়েছে মাটিতে। আন্দোলনকারীদের একাংশ রাজপথে এঁকেছেন মা দুর্গার পটচিত্রও, আর সেই চিত্র এখন দলিত হচ্ছে মানুষের দ্বারাই।
গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিকেল কলেজে এক জুনিয়র ডাক্তারের নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। এক মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সেই বিচার এখনও অধরা তাই প্রতিবাদ আজও অবিরত। তরুণী হত্যার প্রতিবাদে সরব হওয়ার একটি অংশ হিসাবে সল্টলেকের রাজপথে আঁকা হয়েছিল মা দুর্গার ছবি।
স্লোগান অবরোধ শেষে আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরে গেছেন ঠিকই কিন্তু রাস্তায় অবহেলায় পড়ে রয়েছে মা দুর্গার সেই পটচিত্র। ব্যস্ত রাস্তায় সেই পটচিত্রের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কেউ থুথু ফেলছেন গালে, কেউ আবার জুতো পরে মাড়িয়ে দিচ্ছেন ত্রিনয়ন। এই দৃশ্য দেখে বেজায় চটেছেন পুরোহিত শ্রেণী এবং পূজো প্রেমিক মানুষরা।
(আরও পড়ুন: জানেন বিশ্বকর্মার সন্তানদের পরিচয়? রামায়ণেও রয়েছে তাঁদের উল্লেখ)
শাস্ত্রজ্ঞ জয়ন্ত কুশারি বলেন, ‘যা হচ্ছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। হাতে আঁকা দুর্গা জুতো পায়ে মাড়িয়ে নিহত চিকিৎসককেও অসম্মান করছেন আন্দোলনকারীরা। অপমান করা হচ্ছে বাংলার প্রত্যেক মা এবং মেয়েকে। বিশ্বের প্রতিটি মায়ের অবয়বেই দুর্গা বর্তমান। আমরা মন্ত্র উচ্চারণের সময় বলি, ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপেন সংস্থিতা। প্রত্যেক মা এবং মেয়ের মধ্যেই তিনি বর্তমান আর তাই দুর্গাকে অপমান করা মানে নারী জাতিকে অপমান।’
মা দুর্গার পটচিত্রের ওপর দিয়ে হেঁটে চলার দৃশ্য দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন কলকাতার পুজো আয়োজকরাও। শহর কলকাতার দুর্গাপুজোর আয়োজকদের মধ্যে সবথেকে বড় সংস্থা ফোরাম ফর দুর্গোৎসব, যার সঙ্গে যুক্ত কলকাতার ৪০০টি বড় ক্লাব। ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু জানিয়েছেন, ‘তিলোত্তমা বিচার পাক এটা আমরা সকলেই চাই। কিন্তু মা দুর্গার ছবি এঁকে যেটা হলো তা অত্যান্ত লজ্জাজনক। রাস্তায় মায়ের ছবি আঁকার পর তা কেউ মাড়িয়ে চলে যাবে এটা দেখাও কষ্টকর।’
মা দুর্গার পটচিত্র অপমানের প্রসঙ্গে পুরোহিত নিতাই চক্রবর্তী বলেন, ‘দেবী দুর্গাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা সবাই চাই নিহত তরুণী বিচার পাক। কিন্তু রাস্তায় ঠাকুর এঁকে আন্দোলন করা এবং তারপর সেই চিত্রের ওপর মানুষের জুতো পরে চলে যাওয়া, এটা মানা যায় না।’
(আরও পড়ুন: কর্মের দেবতা বিশ্বকর্মা, তাঁর পুজোয় বন্ধুকে পাঠান পুজোর শুভেচ্ছা বার্তা)
মা দুর্গার ফটো চিত্রের প্রসঙ্গে উঠে এসেছে বামপন্থীদের প্রসঙ্গও। সামাজিক মাধ্যমে শ্যামল সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ‘বামপন্থীরা পুজো মানে না। পুজোর চার দিন মন্ডপ প্রাঙ্গণে বইয়ের স্টল দেয়। এই দ্বিচারিতা সাংঘাতিক। বামপন্থীদের একাংশ আর জি কর কান্ডের পরেই আওয়াজ তুলেছিল, দুর্গাপুজো বন্ধ করে দেওয়া হোক। ঠিক তারপরেই রাস্তায় হলুদ রং দিয়ে দশভূজা আঁকা হয়েছিল। এরাই এখন রাস্তায় দুর্গার ছবি এঁকে মাকে অপমান করছে।’