দুর্গাপুজো মানেই শুধু কলকাতার বড় বড় বারোয়ারি পুজো নয়, পুজোর আসল আনন্দ নিতে হলে আপনাকে যেতে হবে গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে। ঠিক তেমনই একটি পুজো মালদা জেলার বামনগোলা ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের খুটাদহ এলাকার পুজো, যা বর্তমানে ‘খুটাদহ সার্বজনীন দুর্গাপুজো’ নামে পরিচিত।
১৯৬৪ সালে এই পুজোর সূচনা হয়। প্রথমে দুই বাংলার মানুষ মিলেমিশে এই পুজো করতেন। এই পুজো ঘিরে বসত বিরাট বড় মেলা। পরবর্তীকালে পুজোর স্থান কাঁটাতারের অপরপ্রান্তে পড়ে যাওয়ায় মন্দিরের স্থান পরিবর্তন করা হয়। এখনও মূল মন্দিরের ঘট নিয়ে এসে পুজো করা হয় খুটাদহ গ্রামের নতুন মন্দিরে।
খুটাদহ সার্বজনীন দুর্গা পুজো মন্ডপের নাটমন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। শ্রী মানস রঞ্জন গণের প্রচেষ্টায় মহালয়ার দিন এই নাটমন্দির তৈরি করা হয়েছিল। তারপর থেকেই ওপার বাংলার মন্দির থেকে ঘট নিয়ে এসে এপার বাংলায় পুজো করা হয়।
(আরও পড়ুন: কোন মন্ত্রে শতশত বছর ধরে টিঁকে ভারতের মন্দিরগুলি? 'বিস্ময়' ফুটিয়ে তুলবে এই পুজো)
এই পুজোকে ঘিরে প্রতি বছর বামনগোলার খুটাদহসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা আনন্দে মেতে ওঠেন। তবে প্রতি বছর এই পুজো করার আগে বিএসএফের অনুমতি নিতে হয়। যদিও বিগত কয়েক দিনে বাংলাদেশের অশান্তির জেরে এবং বন্যা পরিস্থিতির ফলে এই বছর কিছুটা হলেও ফিকে হয়ে এসেছে পুজোর আনন্দ।
এই পুজো নিয়ে কমিটির সদস্যরা জানান, ৬০ বছর ধরে নিয়ম মেনে দুর্গা পুজা হয়ে আসছে এই গ্রামে। মহা অষ্টমীর দিন এলাকার বিভিন্ন মন্দির থেকে মায়ের মন্দিরে ভোগ আসে, যে ভোগ বিভিন্ন মন্দিরের বিতরণ করা হয় নবমীর দিন। প্রতিবছরের মতো এই বছরও পুজো কমিটির তরফ থেকে দুটি ছেলের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়া হবে, সাথে দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিবছরের মতো।
বাংলাদেশ সীমান্তের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পুজো কমিটির এক সদস্য বলেন, 'মন্দিরের অর্ধেক বাংলাদেশ এবং অর্ধেক এই দেশে তবে মূল পুজো হয় সীমান্তের ওপারে। এই বছর পুজো হবে ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশের কাউকে আমরা আমন্ত্রণ করছি না বা বাংলাদেশের কোনও দর্শনার্থীকে আমরা প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।'
(আরও পড়ুন: পুজোয় জমা হওয়া রাশি রাশি ফুল ফেলে না দিয়ে বানিয়ে নিন ধূপ! কমবে পরিবেশ দূষণ)
তিনি আরও বলেন, 'আমরা মূল মন্দিরে শুধু পুজো করে চলে আসব, কিন্তু ওপার বাংলার কাউকেই আমন্ত্রণ জানাবো না। বন্যা পরিস্থিতির পাশাপাশি ওই দেশে আমাদের হিন্দু ভাইদের পুজো করতে দেওয়া হচ্ছে না, তাই আমরাও ওই দেশের মানুষদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি না। এটি আমাদের কাছে ভীষণ দুঃখের।'