সুভাষচন্দ্র বসু থেকে সত্যজিৎ রায়, মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে চিত্তরঞ্জন দাস, একসময় যে বাড়িতে ছিল গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বদের আনাগোনা, এই বাড়িটি হল শ্রীরামপুরের বহু পুরনো ঐতিহ্যময় রাজবাড়ি। এই রাজবাড়িতেই ৩৪০ বছর ধরে বৈষ্ণব মতে চলছে দুর্গাপুজো। চলতি বছর ৩৫০ বছরে পদার্পণ করলো এই পুজো।
‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ থেকে ‘শ্বেতকালী’, এই রাজ বাড়িতে হয়েছে বহু সিনেমার শুটিং। রাজবাড়ির বড় বড় গম্বুজে আলপনা দেখলে আজও মুগ্ধ হতে হয়। আর এই রাজবাড়ির ঠাকুরদালানেই প্রতিবছর তৈরি হয় একচালা দেবী মূর্তি।
(আরও পড়ুন: পুজোয় রসনা তৃপ্ত হোক দক্ষিণী স্টাইলের কাঁকড়া রোস্টে, রেঁধে ফেলুন এভাবে)
প্রায় ৩৫০ বছর আগেকার এই দুর্গাপুজোয় বৈষ্ণব মতে পুজো করা হয়। রাজবাড়ির প্রাচীন পুঁথি মেনে পুজো হয় এখানে। তবে বলি প্রথা কোনওদিনই ছিল না এই পুজোয়। এই পুজো শুরু করেছিলেন হরি নারায়ণ গোস্বামী, তারপর থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন গোস্বামী পরিবারের সদস্যরা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, যে সময়ে দিল্লির সিংহাসনে আকবর শাসন করতেন, সেই সময়ে পাটুলি থেকে ব্রাহ্মণ রাম গোবিন্দ গোস্বামী তাঁর পরিবার নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। পথে রামবাবুর গর্ভবতী স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। শ্রীরামপুরের তীরে স্ত্রীকে নিয়ে নামেন রাম গোবিন্দ। জায়গাটি তাঁর বড় ভালো লেগে যায়। শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায়ের কাছে রাম গোবিন্দ অনুমতি চান শ্রীরামপুরে থাকার জন্য, কারণ রাজার অধীনেই তখন শ্রীরামপুর ছিল।
(আরও পড়ুন: প্রতিপদ থেকেই পুজোর রীতি, এই রাজবাড়িতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে থাকার বন্দোবস্ত)
রাজা রামমোহন রায় শ্রীরামপুরের কিছু অংশ নিয়ে রাম গোবিন্দ গোস্বামীকে থাকতে অনুমতি দেন। তারপর থেকেই গোস্বামী রাজাদের স্থায়ী বসবাস হয়ে যায় শ্রীরামপুর। রাম গোবিন্দের নাতি হরি নারায়ন গোস্বামীর আমল থেকে শুরু হয় দুর্গাপুজোর সূচনা। সেই পুজোই চলছে বছরের পর বছর ধরে।
প্রসঙ্গত, একসময় দুর্গাপুজোয় রাজবাড়ির অন্দরে গান গেয়ে আসর জমিয়েছিলেন অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি থেকে শুরু করে ভোলা ময়রা, রূপচাঁদ পক্ষীর মত শিল্পীরা। পুজোর সময় খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ছিল সকলের জন্য। আজ সেই সমস্ত আরম্ভর না থাকলেও রাজবাড়ির পুজোর ঐতিহ্য কিন্তু আজও একই ভাবে বর্তমান। এখনও বহুদূর থেকে মানুষ আসেন রাজবাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে।