Durga Puja 2024: ঘুমের মধ্যে স্বপ্নাদেশ এসেছিল দেবীর। বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল সেই দুর্গা পুজো। কিন্তু তার পর দেশ বিভক্ত হয়ে যায়। কাঁটাতার ভাগ করে দেয় প্রাপ্য জমি। পুজোও তার পর থেকে পারবদল করে। ওপারের পুজো চলে আসে পশ্চিমবাংলায়। ১৮৫০ সালে বাংলাদেশের পূর্বপুরুষ চন্দ্রনাথ তরফদারের উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল দুর্গা পুজো। পরবর্তী প্রজন্ম সেই পুজো নিয়ম করে প্রতি বছর আয়োজন করেছে। তবে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ও ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গঠনের ঘটনা অনেকটাই আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। আলোড়ন পৌঁছে গিয়েছিল তরফদার পরিবারের অন্দরেও। তাই ১৯৭৯ সালে তৎকালীন প্রজন্মের হাত ধরে কাঁটাতার পেরোলেন উমা। পুরাতন মালদার মোহনবাগান এলাকায় আয়োজিত হয় এই পুজো। আজও সেই পুরোনো নিয়ম মেনেই পুজো হয় সেখানে।
আরও পডু়ুন - Durga Puja 2024: দেবীর আত্মপরিচয়ই সভ্যতার উৎসমুখ, কালজুড়ে ছড়িয়ে থাক ‘তাঁর’ উদযাপন
কন্যারূপে এসেছিলেন মা
বর্তমান প্রজন্মের পুজো উদ্যোক্তা রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায় ‘চন্দ্রনাথ তরফদার শুধু পুজো শুরুর নির্দেশই পাননি৷ মা তাঁকে স্বপ্নাদেশে পুজোর সামগ্রীরও ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন৷ স্বপ্নে জানিয়েছিলেন, গ্রামের পুকুরপাড়ে পুজোর সমস্ত সামগ্রী রাখা আছে৷ চন্দ্রনাথ যেন সেসব নিয়ে আসেন৷ পরদিন নির্দিষ্ট স্থানেই পুজোর সব সামগ্রী পান চন্দ্রনাথ৷ আজও সেসব সামগ্রীতেই মায়ের পুজো হয়৷ দেবী মা যে চন্দ্রনাথকে নিজের পিতা হিসাবে প্রতিপন্ন করেছিলেন, তারও উদাহরণ মিলেছিল৷ চন্দ্রনাথের কোনও মেয়ে ছিল না৷ অথচ একবার গ্রামে শাঁখারি শাঁখা বিক্রি করতে এসেছিল৷ একটি মেয়ে তাঁর কাছে শাঁখা নিয়ে যায়৷ শাঁখারিকে বলে, তার বাবা চন্দ্রনাথ তরফদার শাঁখার দাম মিটিয়ে দেবে৷ ওই শাঁখারি চন্দ্রনাথবাবুর কাছে শাঁখার দাম চাইতে গেলে তিনি বুঝতে পারেন, স্বয়ং দেবীই তাঁর মেয়ে হয়ে সেই শাঁখা নিয়ে গিয়েছেন৷’
আরও পডু়ুন - Durga Puja 2024: আজও চণ্ডীমঙ্গলের আসর বসে বালুরঘাটের এই পুজোয়, গ্রামবাংলার আসল আমেজ এখানেই
জাগ্রত মায়ের কাছে শাঁখা নিবেদন করাই রীতি
এখনও তরফদার বাড়ির মায়ের মূর্তির কাঠামো তৈরির সময় থেকে শাঁখা এবং পলা পরানো হয়। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, দেবীকে শাঁখা নিবেদন করলে বাড়ির মেয়েরা অবিবাহিত থাকে না। এমনকি বিবাহিত মহিলাদের সন্তান প্রাপ্তির মনস্কামনা পূরণ হয়। বিয়ের বয়স হলেই বাড়ির মেয়েদের ভালো পাত্রের সঙ্গে বিয়ের জন্য অভিভাবকরা দেবী দুর্গার কাছে শাঁখা নিবেদন করে যান। বছর ঘোরার আগে সেই মেয়ের বিয়েও হয়ে যায়। তরফদার বাড়ির দেবী দুর্গার এই মাহাত্ম্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। দেবী এতই জাগ্রত যে তরফদার বাড়িতে কোনোদিন মাছ, মাংসসহ আমিষ খাবার ওঠে না। বৈষ্ণব মতেই এখানে মায়ের পুজো হয়৷
নিরামিষ ভোগে পুজো হয় মায়ের
পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে মোহনবাগান গ্রাম৷ খানিকটা দূরেই হবিবপুর ব্লক৷ গ্রামে রয়েছে তরফদার পরিবারের দুর্গামন্দির। একান্নবর্তী পরিবার তরফদার বাড়ির। পরিবারের চার শরিক রবীন্দ্রনাথ, বিষ্ণুপদ, গোবিন্দ আর মানিক। পূর্বপুরুষের চালু করা দুর্গাপুজোর আয়োজন তাঁরা এখনও করে যাচ্ছেন৷ প্রত্যেক শরিক বিবাহিত। তাঁদের সংসার রয়েছে৷ প্রত্যেকেই ব্যবসা করেন। তবে পুজোর চারদিন এক হাঁড়িতেই রান্না করে খাওয়াদাওয়া করেন তাঁরা। ৩৭ বছর ধরে বংশপরম্পরায় মৃৎশিল্পী প্রভাতচন্দ্র পাল এখানে প্রতিমা গড়ছেন। যতদিন প্রতিমা গড়েন, তিনিও নিরামিষ খাবার খান৷