‘সুবর্ণলতা’ সিরিয়ালে দেখানো রান্নাঘরের কথা মনে আছে? ছাড়ুন। সুবর্ণলতা তো অনেক আগেকার যুগের কথা হয়ে গেল, নিদেনপক্ষে ৯০ দশকের রান্না ঘরের কথাও যদি ধরা যায়, তাহলে দেখবেন আগে প্রতিদিনের খাবার মানেই ছিল মায়ের হাতের রান্না, যার জায়গা এখন নিয়ে নিয়েছে ফুড ডেলিভারি অ্যাপ। মানুষের জীবনের এই পাল্টে যাওয়া সময়কেই এবার প্যান্ডেলবন্দী করতে চলেছে নাকতলা উদয়ন সংঘ।
দুপুর বা রাতে মা-ঠাকুমার ডাকে খেতে বসার জায়গা এখন নিয়ে নিয়েছে ডেলিভারি বয়দের ফোন। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে গরম গরম খাবার বাড়ি পৌঁছে দেন তাঁরা। নিউক্লিয়ার পরিবারের মেয়ে বউদের রান্নার ঝামেলাকে এখন সহজ করে দিয়েছে ডেলিভারি অ্যাপগুলি। একান্নবর্তী পরিবারের সঙ্গে নিউক্লিয়ার পরিবারের সেই পার্থক্যকেই এবার মন্ডপের ধাঁচে তুলে ধরতে চলেছে নাকতলা উদয়ন সংঘ।
কলকাতার দক্ষিণ অংশে মূলত নিউক্লিয়ার পরিবারের বাসস্থান বেশি দেখা যায়। জেলা বা শহরতলির বহু মানুষ কাজের সূত্রে থাকেন কলকাতা নিউ গড়িয়া, নাকতলা বা নেতাজি নগর এলাকা গুলিতে। খুব স্বাভাবিক ভাবে এই সমস্ত পরিবারে সদস্য সংখ্যা খুব বেশি হলে ৩ বা ৪। সব থেকে বড় কথা এই পরিবারের মধ্যে বেশিরভাগ পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী উভয়ই কর্মরত। তাই রান্না করার সময় একেবারেই নেই বললেই চলে। তাই অগত্যা ভরসা করতে হয় হোম ডেলিভারির ওপরেই।
(আরও পড়ুন: Durga Puja 2024: টালা বারোয়ারির মণ্ডপে এবার হীরক রাজের সভা! উদয়ন পণ্ডিত থাকবেন ?)
মন্ডপ সজ্জা প্রসঙ্গে নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন দাস বলেন, ‘এখন দক্ষিণ কলকাতার অলিতে গলিতে ডেলিভারি বয়দের বাইক দেখতে পাওয়া যায়। সঠিক সময়ে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য ডেলিভারি বয়দের প্রধান সম্বল হল গুগল ম্যাপ, এই গুগল ম্যাপকেই ফুটিয়ে তোলা হবে আমাদের মন্ডপ সজ্জার মাধ্যমে।’
দর্শকরা মন্ডপ পরিদর্শন করতে ঢুকলেই শুনতে পাবেন রেকর্ড করা অগুনতি মোবাইলের কথোপকথন এবং রিংটোন। কোথাও বলতে শোনা যাবে, আপনার পার্সেল এসে গিয়েছে। কোথাও আবার শোনা যাবে, আপনার ঠিকানাটা একটু বলবেন। এরপরেই দর্শকদের চোখ আটকে যাবে ২৫ ফুট মোচা সহ একটি কলার কাঁদিতে, যেটি সংসারের গৃহকর্ত্রীর প্রতীক হিসাবে সাজানো হবে। একজন মা যেভাবে সন্তানকে আগলে রাখেন তেমন মোচাটিও কলাগুলিকে একটি কাঁদিতে ধরে রেখেছেন।
একান্নবর্তী পরিবারের প্রতীক হিসাবে দেবী প্রতিমার সামনে রাখা থাকবে ১৪ ফুট ব্যাসার্ধের ধাতুর তৈরি একটি বিশাল হাঁড়ি, যার মধ্যে ফুটবে ভাত। সামনে রাখা থাকবে বড় গোল টেবিল যেখানে একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যরা খেতে বসেছেন, এমন চিত্র দেখা যাবে। টেবিলে রাখা থাকবে নামি ব্র্যান্ডের আসল ডিনার সেট।
একান্নবর্তী পরিবারের বৈপরীত্য বোঝাতে দেবী প্রতিমার পিছনেই সাজানো থাকবে পায়রার খোপের মত ছোট ছোট আস্তানা, যেখানে বসবাস করতে দেখা যাবে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির সদস্যদের। এরপরেই দেখানো হবে রাস্তায় ডেলিভারি বয়দের, মোটরবাইক স্কুটার চেপে যারা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি। যদিও এগুলি সবই হবে ধাতব তারের তৈরি মডেল।
উদ্যোক্তাদের মতে, বাড়ির খাবারের কোনও বিকল্প হয় না কিন্তু দিনের পর দিন বাধ্য হয়ে মানুষ রেস্তোরাঁয় খাবার খাচ্ছেন। সময়ের অভাবে প্রতিদিন ফুড ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করা হচ্ছে। এই খাবারগুলি যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ তেমন এর মধ্যে থাকে না কোনও আবেগ। পাল্টে যাওয়া পরিবারের এই চিত্রই তুলে ধরবে উদয়ন সংঘের 'একান্নবর্তী'।