পশ্চিমবঙ্গে মূলত দুই ধরনের পুজো হয়, বারোয়ারি এবং সাবেকি। তবে বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা অনেক বেশি হলেও দুর্গা পুজোর (Durga Puja 2024) আসল আনন্দ কিন্তু পাওয়া যায় সাবেকি পুজোতেই। সাবেকি পুজোর সংখ্যা এখন অনেকটাই কমে গেছে অর্থ বা লোকবলের অভাবে। তবে আজও মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বুকে এমন একটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে পালিত হয় ১৬টি বনেদি পুজো।
মুর্শিদাবাদ জেলার অত্যন্ত প্রাচীন এই গ্রাম, নাম পাঁচথুপি গ্রাম। শশাঙ্কের রাজত্বকালে এই গ্রামে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ ঘটেছিল, যার সাক্ষী হিসেবে এই গ্রামে এখনও বর্তমান বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ। সামন্ত রাজা নরপতি এই গ্রামকে নিজের রাজধানী বলে ঘোষণা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, ঔরঙ্গজেবের আমলে তাঁর গৃহশিক্ষক মৌলানা হযরত এই গ্রামেই বসবাস করতেন। এই গ্রামের সঙ্গে যে ইতিহাসের বহু ঘটনার সরাসরি যোগ রয়েছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
(আরও পড়ুন: দুর্গাপুজোর আগে এই ৩ টিপস মেনে সাজিয়ে তুলুন ঘর, নজর কাড়বে সকল অতিথির)
তবে ইতিহাসের স্মৃতি বহন করার পাশাপাশি এই গ্রামের আরও একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বহু যুগ ধরে এই গ্রামে ১৬টি পারিবারিক দুর্গা পুজো হয়ে আসছে। ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রামটিকে দুর্গা গ্রামও বলা হয়। গ্রামের অন্যান্য পুজো গুলির মধ্যে অন্যতম হলো পাঁচথুপি মধ্যম বাড়ির দুর্গাপুজো।
প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন এই দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে আজও উৎসবে মেতে ওঠেন এলাকাবাসী। প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই এই দুর্গা পুজো পালন করা হয় নবরাত্রি দিন থেকেই। মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকেই ঘট নিয়ে এসে পুজোর সূচনা করেন পরিবারের সদস্যরা। চতুর্থীর দিন ঠাকুরকে আটনের দালালে তুলে পুজো করা হয়।
টানা ন'দিন হোম যজ্ঞ এবং চন্ডী পাঠের মাধ্যমে চলতে থাকে মল্লিক পাড়ার মধ্যম তরফের পুজো। নবমীর দিন পূর্ণ আহুতি দিয়ে হোম যজ্ঞের সমাপ্তি হয়। দশমীর দিন প্রতিমা নিরঞ্জনের পর গ্রাম দেবীর পুজো দিয়ে ফের অপরাজিতার পুজো করে তবে হয় পুজোর সমাপ্তি। সেই দিন দেবী দশভুজাকে খিচুড়ি ভোগ দেওয়ার রীতি রয়েছে।
(আরও পড়ুন: পুজোয় ভূরিভোজ মানেই মাছের পদ থাকা চাই ? বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন ‘কাসুন্দি মাছ’)
পুজো এখনও বর্তমান হলেও আগেকার মতো সেই ঐতিহ্য আর নেই। লোকবল বা অর্থবল কোনওটাই নেই তাই কোনও রকমে পূজো চালাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। এই পুজোকে কেন্দ্র করে পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হন পুজোর চার দিন। শুধু গ্রামের মানুষ বা জেলার মানুষ নয়, আশেপাশের শহরের বহু মানুষ এই পুজো দেখতে ভিড় করেন মুর্শিদাবাদের এই ছোট্ট গ্রামে।