Durga Puja 2024: পঞ্জিকা অনুযায়ী, ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বোধনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজো। দেবীর বোধনের পর সপ্তমীর সকালে ঘট নিয়ে যাওয়া হয় নদীতে, স্নান করানো হয় কলা বউকে। কলা বউকে স্নান করানোর রীতি চলাকালীন কোথাও বাজে ঢাক, কোথাও আবার ডাকা হয় ব্যান্ড পার্টি। কিন্তু কখনও কি শুনেছেন, কলা বউকে স্নান করিয়ে নিয়ে আসার সময় গুলি ছোঁড়া হয়?
মালদার রায় বাড়ির পুজোয় পালন করা হয় এমনই এক অদ্ভুত নিয়ম। সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর উপস্থিতিতে কলা বউকে স্নান করিয়ে মন্ডপে নিয়ে আসার সময় শূন্যে ছোঁড়া হয় পাঁচ রাউন্ড গুলি। রায় বাড়ির এই রীতি দেখার জন্য সপ্তমীর সকালে মন্ডপ প্রাঙ্গনে ভিড় করেন গ্রামবাসীরা।
পুনর্ভবা নদী থেকে ঘটে জল ভরে কলা বউকে স্নান করিয়ে পূজা মন্ডপে নিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির সদস্যরা বন্দুক থেকে পরপর পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোঁড়েন শুন্যে। যদিও এই বন্দুক থাকে লাইসেন্স প্রাপ্ত এবং গুলি ছোঁড়ার আগে বিএসএফের অনুমতিও নিতে হয় পরিবারের সদস্যদের।
(আরও পড়ুন: পুজোয় ত্বকের পাশাপাশি যত্ন নিন নাভিরও, কেন জরুরি এটি ? জানুন উপকারিতা)
লোকমুখে শোনা যায়, ১৯১৮ সালে শিবপ্রসাদ রায়ের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই দুর্গাপুজো। জমিদার বাড়ির অন্দরেই তৈরি হয় প্রতিমা। মূর্তি তৈরি করেন স্থানীয় মৃৎশিল্পী। পুজোর ৪ দিন রায় বাড়িতে থাকে ভোজনের আয়োজন। তবে ঠিক কী কারণে সপ্তমীর সকালে কলা বউ স্নান করিয়ে নিয়ে আসার সময় শূন্যে গুলি ছোঁড়ার নিয়ম শুরু হয়েছিল তা আজও অস্পষ্ট।
এই পুজো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রায় পরিবারের পুজো উদ্যোক্তা তথা পরিবারের অন্যতম সদস্য রাকেশ কুমার রায় বলেন,' ২২৪ বছরের পুরনো এই রায় বাড়ির পুজো। মহালয়ার দিন থেকেই দেবীর আরাধনা শুরু হয়ে যায়। সপ্তমীর সকালে নাট মন্দির থেকে সামান্য দূরে পুনর্ভবা নদীতে ঘটে জল ভরা হয় এবং কলা বউকে স্নান করানো হয়।'
(আরও পড়ুন: পুজোয় বাড়িতে দই বড়া বানানোর প্ল্যান? এই নিয়মগুলি মানলে খেতে লাগবে দুর্দান্ত)
তিনি আরও বলেন, 'কলা বউকে স্নান করিয়ে পুজো মণ্ডপে ফেরার সময় আমি নিজে লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুক দিয়ে ৫ রাউন্ড শূন্যে গুলি ছুঁড়ে প্রথা বজায় রাখি। যদিও এর জন্য বিএসএফের অনুমতি নি আমরা। আমার বাবা এবং ঠাকুরদার মুখেই এই প্রচলনের কথা শুনে এসেছি চিরকাল। বর্তমানে আমরাই এই প্রথা টিকিয়ে রেখেছি। তবে যতটুকু জানি, এলাকার শান্তি রক্ষা এবং পূর্বপুরুষদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই কাজ করা হয়। অষ্টমী এবং নবমীর দিন বাড়িতে গ্রামবাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় ভোজনের জন্য। দশমীর দিন সমস্ত প্রথা মেনে দেবীর বিসর্জন করা হয়।'
প্রায় ২২৪ বছরের পুরনো হবিবপুর ব্লকের তিলাসন গ্রামের রায় বাড়িতে এই দুর্গা পুজো আজও বয়ে নিয়ে চলেছে পুরনো ইতিহাস। শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের এই ছোট্ট গ্রামকে করে তোলে আনন্দমুখর। তবে শুধু গ্রামবাসীরা নয়, আশেপাশের এলাকার বহু মানুষ এই পুজো দেখার জন্য ভিড় করেন রায় বাড়িতে।