দুর্গাপুজো মানেই পুজোর ছুটি। আর ছুটি মানেই ঘুরতে যাওয়া। পুজোর এই ছুটিকে কাজে লাগিয়ে বহু মানুষ ঘুরতে বের হন। কেউ কেউ আবার পুজোর নেই এমন সব অফবিট জায়গাতে ছুটি চলে যান। পুজোর দিনগুলি কাটাতে চান একদম অন্যরকম পরিবেশে। তাঁরা ঘুরে আসতে পারেন পুরুলিয়ার এই অফবিট জায়গা থেকে। এই জায়গার নাম দুয়ারসিনি। পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুয়ারসিনি (Duarsini Tour Guide)। গতানুগতিক স্থানে না গিয়ে পুজোয় যেতেই পারেন এই স্থানে।
কেমন এই দুয়ারসিনি?
দুয়ারসিনি (Duarsini Tour) পুরুলিয়ার কংসাবতী নদীর তীরে জঙ্গলমহলের পর্যটনকেন্দ্র দুয়ারসিনি । চারিদিক ছোট ছোট পাহাড় দিয়ে ঘেরা। বনের মধ্যে নিরিবিলি এই স্থান অফবিট ডেস্টিনেশন হিসেবে অনেকেরই প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকবে। কংসাবতী নদীর দক্ষিণে কুচিয়া বিটের অন্তর্গত দুয়ারসিনি। এখানে পাহাড়গুলি আকারে ছোট ও সবুজে ঘেরা। পাশেই রয়েছে আদিবাসী গ্রাম। ফলে অফবিট কথাটি যথাযথ।
আরও পড়ুন: (পুজোয় একটু মিষ্টিমুখ না হলে চলে ? বাড়িতেই বানিয়ে নিন নবদ্বীপের মিষ্টি দই)
কখন যাবেন?
জুলাই অগস্ট মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়টি দুয়ারসিনি ভ্রমণের সেরা সময়।যদিও বছরের যেকোনো সময়তেই এখানে যাওয়া যেতে পারে।
কীভাবে যাবেন?
• রোড ট্রিপ যারা করবেন তারা কলকাতা থেকে গাড়ি করে যেতে হলে খড়গপুর হয়ে পুরুলিয়া, বান্দোয়ানের উপর দিয়ে গিয়ে পৌঁছাতে পারেন দুয়ারসিনি।
• ট্রেনের ক্ষেত্রে ঘাটশিলা যাওয়ার জন্য রয়েছে অনেক ট্রেন। হাওড়া-বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস সকাল ৬:২৫-এ হাওড়া থেকে ছেড়ে ঘাটশিলা পৌঁছোয় সকাল ৯.১৫-তে। ইস্পাত এক্সপ্রেস সকাল ৬:৫৫-এয় হাওড়া থেকে ছেড়ে ঘাটশিলা পৌঁছোয় সকাল ৯:৫০-এ। এই দুটি ট্রেন আদর্শ। রয়েছে লালমাটি এক্সপ্রেসও। ট্রেন ছাড়ে প্রতি মঙ্গল আর শনিবার। সকাল সাড়ে আটটায় হাওড়া থেকে রওনা দেয় আর ঘাটশিলা পৌঁছোয় সকাল সাড়ে ১১টায়। স্টেশন থেকে বেরিয়ে অটো করে নিলেই পৌঁছে যেতে পারবেন গন্তব্যে।
• বাসের ক্ষেত্রে কলকাতা থেকে বেশ কিছু বাস ছাড়ে। যা সরাসরি বান্দোয়ান যায়। সেখান থেকে গাড়ি বা বাসে করে যাওয়া যাবে দুয়ারসিনি
আরও পড়ুন: (পুজোর লাস্ট মিনিট শপিংয়ে জামদানি শাড়ি কিনবেন ভাবছেন? কী কী দেখে নেবেন জেনে নিন)
কোথায় থাকবেন
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে দুয়ারসিনিকে ইকো টুরিজমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনলাইনে বুক করা যায় রিসর্ট। চার জনের রুম ও ডরমেটরি রয়েছে এখানে। রুমের ভাড়া ২০০০ টাকা প্রতি রাতে। এসির বন্দোবস্থ আছে। বাথরুম ঝাঁ চকচকে। ডরমেটারি-তে চারজন থাকতে পারেন। শেয়ার করার ব্যবস্থাও আছে। একটি বেডের এক রাতের ভাড়া ২০০ টাকা। এছাড়াও দুয়ারসিনি প্রকৃত ভ্রমণ কেন্দ্রের কটেজে আছে সেখানেও থাকতে পারেন। আগে কটেজ বুক করে নিলে ভালো। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগের সাইটে গিয়ে হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলে কাজ হাসিল হবে।
দর্শনীয় স্থান
দুয়ারসিনি কথার বাংলা অর্থ দ্বাররক্ষক ঠাকুর। মনে করা হয়, প্রাচীনকালে লঙ্কার রাজা রাবণ এখানে স্বর্গের সিঁড়ি প্রস্তুত করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া মনে করা হয় লোকদেব দেবীদের নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বৌদ্ধ ভাবনা। বৌদ্ধমতে দিয়াসিনি সিদ্ধা রমণীরা ছিলেন অলৌকিক শক্তিসম্পূর্ণা, যাদের পুজো করা হত মৃত্যুর পর। দিয়াসিনির শেষ অংশ ‘আসিনি’ শব্দ দ্বারা সিদ্ধা রমণীকে বোঝানো হত। পরবর্তীতে এই আসিনি শব্দ পরিবর্তিত হয়ে ‘সিনিতে’ পরিণত হয়। এরপর থেকে শক্তিরূপে ‘সিনি’ দেবতাকে গ্রাম্যদেবতারূপে পূজিত হন। এছাড়াও জঙ্গলে, নেকড়ে, হাতি, ভাল্লুক, বুনো শুয়োরের দেখা মিলবে। রয়েছে সাতগুরুং হ্রদও, যা দেখার মতো।