বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের ৫০ শতাংশই হয় দুই ইদে। তবে এবার কোরবানির ইদে আশানুরূপ পর্যটক পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন পর্যটন এলাকার হোটেল-রিসর্টের মালিকেরা। তাই তার ৪০-৭০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, ইদের সময় পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকে কক্সবাজার। এপর রাঙামাটি, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, কুয়াকাটায় পর্যটকরা যান। সেন্ট মার্টিন ও সুন্দরবনও আকর্ষণের জায়গা। কিন্তু এবার ইদে আগের মতো পর্যটকদের ভিড় হবে বলে মনে করছেন না কক্সবাজার হোটেল রিসর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম শিকদার।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যা বুকিং হয়েছে, তাতে ইদের আগে পরের দুই-একদিন ৫০ শতাংশ রুমই খালি আছে। তবে ইদের কয়েকদিন পর হয়তো পর্যটক বাড়বে। আমরা পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এখন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিচ্ছি। আমাদের এখানে নিরাপত্তা-সহ সার্বিক আয়োজন বেশ ভালো। তারপর গত কোরবানির ইদের চেয়ে এবার সাড়া কম।’
কক্সবাজারে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টের সংখা পাঁচ শতাধিক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনও ৩০ হাজারেরও বেশি পর্যটকের আবাসন ব্যবস্থা আছে। আমরা দুই ইদে মোট পর্যটকের ৫০ শতাংশ পাই।’ তাঁর মতে, ‘এবার গরম এবং মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় হয়তো বা পর্যটক কম।’
তবে কক্সবাজারের একজন ট্যুর অপারেটর আজিজুর রহমান জানান," হোটেলের মালিকরা এরকমই বলে। আসলে ইদের দিন মূলত স্থানীয় লোকজন পর্যটন এলাকায় ঘুরতে যান। আর দূরের পর্যটকরা আসেন ইদের দুই-তিনদিন পর। আর এখন হোটেল মালিকরা ডিসকাউন্টের কথা বললেও তাঁরা তখন আর ডিসকাউন্ট মানেন না। ইচ্ছেমতো হোটেল ভাড়া আদায় করেন।'
মায়ানমারে যুদ্ধাবস্থার কারণে বাংলাদেশের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে এখন পর্যটন বন্ধ আছে। আর পার্বত্য জেলাগুলোর বেশকিছু এলাকায় পর্যটকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আছে।
সুন্দরবনে গত মাসে আগুন লাগার পর সেখানে পর্যটন বন্ধ আছে। ইদের সময় এই তিনটি এলাকায়ও পর্যটকেরা যান। কিন্তু এবার যেতে পারছেন না। তারপরও রাঙামাটিতে পর্যটকদের ভিড় হবে বলে মনে হচ্ছে। রাঙামাটির হোটেল রিসোর্টগুলোর ৮০ শতাংশই বুকিং হয়ে গিয়েছে।
রাঙামাটির পর্যটন মোটেলের বুকিং সহকারী আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘ইদের দিন-সহ পরের দুই-তিনদিন আমাদের কোনো রুম খালি নাই। তিনি বলেন, ‘ইদের তিন-চারদিন পরে নন-এসি রুম পাওয়া যাবে।’
তবে এবার সাজেকেও আগের মতো পর্যটক যাবেন বলে মনে করছেন না সাজেক রিসর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চাকমা জন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ১২৭টি রিসোর্ট কটেজ আছে। তিন হাজার লোক থাকতে পারেন। তবে এবার ইদে আগের মতো সাড়া পাচ্ছি না। তাই ৪০ শতাংশ ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছি। গত ইদে আমরা বুকিং ফিরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। তবে আশা করছি ইদের পর বাড়বে।’ তাঁর কথায়, ‘মানুষের হাতে পয়সা নেই। কস্টিং বেড়ে গিয়েছে। তার ওপরে গরম। এই কারণে হয়তো এবার পর্যটক কম।’
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজম সম্ভামনাময় হলেও গত এক বছরে এই খাতে কিছুটা হলেও ধস নেমেছে বলে মনে করেন আরিফুর রহমান সুমন। তিনি সুনামগঞ্জ হাউজ বোট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘তারপরও এবার ইদে হাওর এলাকায় আমরা ট্যুরিস্টদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমাদের সুনামগঞ্জ-সহ হাওর এলাকায় হাউজ-বোট পর্যটনকে ঘিরে নতুন আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। প্রচলিত পর্যটন স্পটগুলোতে মন্দা চললেও আমাদের বুকিং বেশ ভালো।’ তাঁর মতে, ‘পরিকাঠামো এবং স্থাপনার উন্নতি হলে হাওরে পর্যটনের আকর্ষণ অনেক বাড়বে।’
ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) প্রাক্তন সভাপতি শিহাবুল আযম কোরেশি বলেন, ‘আমাদের সারা বছর যত পর্যটন ট্যুর হয়, তার ৩০ শতাংশ হয় রোজার ইদে। আর ২০ শতাংশ কোরবানির ইদে। আর বাকি ৫০ শতাংশ সারা বছর। আমাদের সংগঠনে ৯০০-এর বেশি ট্যুর অপাটের আছেন। তাঁদের কাছ থেকে যে রিপোর্ট পাচ্ছি। তাতে গত কোরবানির ইদের চেয়ে এবার সাড়া কম।’
তাঁর কথায়, ‘সেন্টমার্টিন, সুন্দরবনে ট্যুরিজম বন্ধ থাকা, আবার মূল্যস্ফীতির কারণে সব কিছুর খরচ বেড়ে যাওয়া, গরম-এইসব মিলিয়ে এবার অবস্থা একটু খারাপ। তবে টাঙ্গুয়া হাওড়ে এবার প্রচুর পর্যটক এই ইদে যাচ্ছেন।’
তাঁর কথায়, ‘২০২৩ সালে বিদেশ থেকে আমাদের দেশে পাঁচ-ছয় লাখ ট্যুরিস্ট এসেছেন। ৫০ লাখ বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গিয়েছেন। আর ডোমেস্টিক ট্যুরিস্ট ওই সময়ে ছিল এক কোটি। ফলে ডোমেস্টিক ট্যুরিজমই আমাদের জন্য সবচয়ে বেশি সম্ভাবনাময়।’ সরকারের নীতি সহায়তা ও পরিকাঠামো এবং স্থাপনার সহায়তা পেলে পর্যটনের উন্নতি হবে বলে মনে করছেন তিনি।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপ-পরিচালক( বিপণন ও ব্র্যান্ডি) মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরাও রিপোর্ট নিচ্ছি। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে ইদ ট্যুরিজমে মন্দার কোনও লক্ষণ দেখছি না। এবারও পর্যটন স্পটগুলোতে ইদে প্রচুর পর্যটক যাবেন বলে আশা করি। আরও বেশি ভিড় হবে ইদের পরে।’ তাঁর কথায়, 'আমরা ব্র্যান্ডিং এবং স্থাপনার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছি।'
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)