প্রতিদিন নিয়মিত শরীর চর্চা করার পাশাপাশি আধঘন্টা থেকে এক ঘন্টা হাঁটা ভীষণভাবে প্রয়োজন। তবে অনেকেই আছেন যারা কাজের ক্ষেত্রে ব্যস্ত হয়ে থাকার কারণে অতটা সময় দিতে পারেন না। আপনার কাছে যদি আধঘন্টাও না থাকে, তাহলে মাত্র ১১ মিনিট ব্যয় করলেই আপনি আপনার শরীর থেকে দূরে রাখতে পারবেন ১১ রকম রোগ বালাইকে।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রত্যেকদিন যদি ১১ মিনিট হাটেন তাহলে আপনার অকাল মৃত্যু থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী রোগ, সবকিছুই আটকানো সম্ভব। প্রত্যেকদিন নিয়মিত হাঁটাহাঁটি মস্তিষ্কের শক্তি এবং সৃজনশীলতাকে বাড়িয়ে তোলে, পাশাপাশি হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস থেকে আপনাকে দূরে রাখে।
ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, প্রত্যেকদিন যদি ১১ মিনিট আপনি হাঁটতে পারেন, তাহলে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ২৫% কমে যায়। প্রায় ৩০ মিলিয়নের বেশি মানুষের মধ্যে এই গবেষণা থেকে জানা যায়, যারা প্রত্যেকদিন হাঁটাহাঁটি করে তাঁরা অনেক ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারেন যারা শরীর চর্চা করেন না তাদের থেকে।
প্রত্যেকদিন ১১ মিনিট হাঁটলে কোন ১১ টি সুবিধা পাবেন আপনি:
সৃজনশীলতা বাড়ায়: প্রত্যেকদিন হাঁটাহাঁটি করলে আপনার সৃজনশীলতা অনেক বেশি বাড়বে এবং আপনি অনেক জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন খুব সহজে। হাঁটাহাঁটি করা ছাড়াও আপনি যদি নাচ করেন বা সাইকেল চালাবেন সেক্ষেত্রেও কিন্তু সৃজনশীলতা বাড়তে পারে।
(আরও পড়ুন: হেমা কমিটির রিপোর্ট নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য! কী প্রতিক্রিয়া দিল মহিলা প্যানেল?)
ক্যালোরি বার্ন: ১১ মিনিট যদি হাঁটতে পারেন তাহলে কিন্তু আপনার শরীর থেকে অনেকটা ক্যালোরি নষ্ট হয়ে যাবে। অল্প সময়ের মধ্যে যদি দ্রুত হাঁটতে পারেন, তাহলে আপনার ওজন কমার পাশাপাশি আপনি অনেক বেশি সুস্থ থাকতে পারবেন।
স্বাস্থ্যের উন্নতি: আপনি যদি প্রত্যেকদিন ১১ মিনিট হাঁটতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং অন্যান্য অঙ্গের পাশাপাশি আপনার হৃদপিন্ডেও অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ ভাবে এবং আপনার হার্ট সুস্থ থাকবে।
অবসাদ কমবে: প্রতিদিন ভোরবেলা বা সন্ধ্যেবেলা যদি আপনি হাঁটাহাঁটি করেন, সে ক্ষেত্রে আপনার মেজাজ অনেক বেশি ফুরফুরে হয়ে থাকবে। প্রতিদিনের কাজের চাপের ফলে যে বিরক্তিভাব তৈরি হয় আপনার মনে, সেটা কেটে যাবে হাঁটাহাঁটি করলে।
জয়েন্টে ব্যথা: বাতের ব্যথায় হাঁটাহাঁটি কিন্তু ভীষণ উপকারী একটি ব্যায়াম। রোজ ১১ মিনিট হাটাহাটি করলে আপনার হাঁটুর তরুনাস্থি সংকুচিত হয় এবং বর্ধিত হয়, যার ফলে আপনার জয়েন্টে পুষ্টি পৌঁছে যায় সঠিকভাবে এবং আপনার বাতের ব্যথা কমে যায়।
মেদ কমায়: প্রত্যেকদিন দ্রুত গতিতে বা অল্প গতিতে হাঁটাহাঁটি করলে আপনার শরীরের বিশেষ করে পেটের মেদ কমে যায়। কোনওরকম ব্যায়াম ছাড়াই কিন্তু আপনি খুব সহজে আপনার পেটের মেদ কমিয়ে দিতে পারেন এইভাবে।
মেজাজ উন্নত হয়: প্রতিদিনের হাঁটাহাঁটি আপনার শ্বাস প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করে, আপনার মনোযোগ বাড়িয়ে তোলে। প্রতিদিন ১১ মিনিট হাঁটলে প্রকৃতির সঙ্গে আপনার সক্ষতা তৈরি হয় এবং আপনি মানসিক দিক থেকে সুস্থ থাকেন।
টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে: ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুযায়ী, যে সমস্ত মানুষ ঘন্টায় চার বা তার বেশি কিলোমিটার গতিতে হাঁটাহাঁটি করেন, তাঁদের শরীরে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
ঘুমের উন্নতি: প্রত্যেকদিন হাঁটাহাঁটি করলে সারাদিন পর আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং আপনার ঘুম ভীষণ ভালো হয়। স্পোর্টস সাইন্স ফর হেলথে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বয়স্ক ব্যক্তিদের ঘুমের সমস্যা সমাধান হতে পারে হাঁটাহাঁটি করলে।
(আরও পড়ুন: বন্ধ ইলিশ আমদানি, ওপার বাংলার সমস্যার জের এপার বাংলার খাবারের পাতে)
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বাড়ায়: প্রতিদিন ১১ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে মস্তিষ্কের নতুন কোষ বৃদ্ধি হয়। আপনি যদি প্রত্যেকদিন মাঝারি গতিতে হাঁটতে পারেন তাহলে আপনার মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভূত নিউরোট্রফিক বা BDNF নামক প্রোটিন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়: খাওয়ার পরে প্রত্যেকদিন ১১ মিনিট যদি আপনি হাঁটতে পারেন তাহলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং হজমের ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে আপনার অ্যাসিডিটি এবং পেটের ফোলাভাব দূর হয়ে যায়।