ছোট্ অর্থাৎ ছুটে চল। নৌকাকে এমনটা বলার কারণ ছুঁচলো মুখের এই সমুদ্রের জল কেটে আবিরাম ছুটে চলতে পারে। তাই থেকে নৌকাটির নামও হল ছোট্। বাংলার নদনদীর সমৃদ্ধ সংস্কৃতিতে এক সময় দাপিয়ে বেরিয়েছে এই ছোট্। হাওড়ার শ্যামপুর, যেখানে রূপনারায়ণ নদ এসে মিশেছে গঙ্গায়, সেখানেই গ্রামে গ্রামে তৈরি হত ছোট্। কিন্তু বর্তমানে সেই চল আর নেই। কারণ রূপনারায়ণের চরে আর ছুটতে পারে এই দুরন্ত গতির নৌকা। তবে বাংলার এই প্রায় বিলুপ্ত ছোট্ সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে ব্রিটেনের গবেষণা। ব্রিটেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা ‘এনডেঞ্জার্ড মেটেরিয়াল নলেজ’ বা ‘বিপন্ন উপাদানের জ্ঞান’ প্রকল্পে সংরক্ষিত হবে ছোট্।
ব্রিটেনের গবেষণার উদ্যোগে
ছোট্ সংরক্ষণের এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন তিন বিজ্ঞানী ও শ্যামপুরের এক নৌকা নির্মাতা। তিন বিজ্ঞানীর মধ্যে রয়েছেন এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন কুপার, ব্রিটেন নিবাসী তথা পুরাতত্ত্ব গবেষক জিশান আলি ও হাওড়ার বাসিন্দা নৌ শিল্প গবেষক স্বরূপ ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন - কোন ওয়েস্টার্ন ড্রেস স্য়ুট করবে, বুঝতে পারছেন না? খেয়াল রাখুন এই টিপস
মিউজিয়ামে থাকবে ছোট্
নৌকা নির্মাতা পঞ্চানন মণ্ডল একটি ৩৫ ফুট লম্বা, ৯ ফুট চওড়া ও ৬ ফুট গভীর ছোট্ গড়ার দায়িত্বে রয়েছেন। প্রসঙ্গত, আগে শ্যামপুরের বাড়ি বাড়ি ছোট্ গড়া হত। কিন্তু এখন সেই ঐতিহ্য বিলুপ্ত বললেই চলে। এই অবস্থায় শুধুমাত্র স্মরণশক্তির উপর নির্ভর করে পঞ্চানন। বছর তিরিশ আগে শেষবার ছোট্ গড়ার পর এই বারে তার সঙ্গে এই কাজে হাত লাগিয়েছেন তাঁর চার পুত্র। আগামী দিনে এই নৌকাটি মেরিটাইম মিউজিয়ামে রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন - উইকেন্ডে চমকে যাবে বাড়ির সকলে! বানিয়ে ফেলুন চিকেন আঙ্গারা, রইল রেসিপি
বাংলার সংস্কৃতি বিশ্বের দুয়ারে
ছোট্ নির্মাণের গোটা প্রক্রিয়া ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হয়েছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। একই সঙ্গে সংগৃহীত হয়েছে সব তথ্য। ব্রিটেনের মিউজিয়ামে সেই সব তথ্য রাখা হয়েছে। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের নৌকা নির্মাণ সংস্কৃতি এভাবেই পৌঁছে গিয়েছে বিশ্বের দুয়ারে। ছোট্ মৎস্যজীবীদের মুখের ‘জলের রাজা’ নামেই পরিচিত। মাছ ধরার পাশাপাশি পণ্যবহনেও লাগত এই নৌকা। কিন্তু আজ সেই নৌকার দেখা মেলা ভার। সংবাদ মাধ্যমের কাছে পঞ্চাননবাবুর কথায়, ‘জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ফের ছোট্ তৈরি করতে পারলাম। এটাই পরম প্রাপ্তি।’