বুধবার জম্মু ও কাশ্মীরের গুলমার্গেj মহারানি মন্দিরে আগুন লাগে। মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে পুরো কাঠামোটি ছাই হয়ে যায়। মন্দিরে আগুন লাগার খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও ততক্ষণে মন্দিরটি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এই মন্দিরটি শুধুমাত্র গুলমার্গের জন্যই নয়, সমগ্র কাশ্মীরের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এর ইতিহাস কাশ্মীরের শেষ রাজা হরি সিং এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে জড়িত।
মন্দিরে আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মন্দিরে আগুন লাগার পর পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর অনেক চেষ্টা করে। তবে মন্দিরটি রক্ষা করা যায়নি। মন্দিরের পুরোহিত পুরুষোত্তম শর্মা বলেছেন যে মন্দিরে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল এবং প্রবল বাতাসের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে কাঠের কাঠামোতে আগুন ধরে যায় এবং দুর্ঘটনা ঘটে। মন্দিরের পুরোহিত অগ্নিসংযোগের ষড়যন্ত্রের মতো কোনও কথা মানতে চাননি।
মন্দিরটি পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর, মন্দির সম্পর্কিত অনেক গল্প স্থানীয় মানুষের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই মন্দিরের ইতিহাস প্রায় ১০৯ বছরের পুরনো যখন কাশ্মীরের শেষ মহারাজা হরি সিংয়ের স্ত্রী রানি মোহিনী এই মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। এই মন্দিরটি ১৯১৫ সালে নির্মিত হয়েছিল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই মন্দিরটি গুলমার্গ ও আশেপাশের এলাকার বহু মানুষের বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। ভগবান শিব এবং মা পার্বতীকে উৎসর্গ করা এই মন্দিরটি একটি খুব সুন্দর জায়গায় তৈরি করা হয়েছে যেখান থেকে গুলমার্গের সমস্ত কোণ দেখা যায়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মন্দিরটি মহারানি মন্দির নামে পরিচিতি লাভ করে। এই মন্দিরটি কাঠ এবং পাথর দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। বড় বড় জানালা সহ বারান্দা ছিল। এই মন্দিরের ভিতরে দাঁড়িয়ে পুরো গুলমার্গ দেখা যায়।
ভারতের বহু রাজ্যে যখন বিচ্ছিন্নতাবাদের পরিস্থিতি ছিল এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতরা এই এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তখন এই মন্দিরের যত্ন নেওয়ার জন্য কেউ অবশিষ্ট ছিল না। এরপর গোলাম মোহাম্মদ শেখ নামে এক মুসলমান এই দায়িত্ব নেন, তিনি আগে থেকেই চ্যারিটেবল ট্রাস্টের প্রহরী হিসেবে কাজ করছিলেন। এই কাজের জন্য তিনি প্রতি মাসে বেতনও পেতেন। গোলাম শেখ বারামুল্লার দণ্ডমুহ নামের একটি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ২৩ বছর ধরে মন্দিরের দেখাশোনা করেছিলেন যখন কোনও পণ্ডিত সেখানে ছিলেন না। এ জন্য তিনি সম্পূর্ণ পূজা পদ্ধতিও শিখেছিলেন এবং পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে ভোলেনাথের সেবা করেছিলেন। গোলাম মোহাম্মদ শেখকে মানুষ এখন 'পণ্ডিত জি' নামেও চেনেন।
এই মন্দিরটি অনেক পর্যটকদের প্রিয় স্থানগুলির মধ্যে একটি ছিল, এই মন্দিরটিতে অনেক সিনেমার শুটিংও হয়েছে। বলিউড সিনেমা 'আপ কি কসম'-এর 'জয় জয় শিব শঙ্কর' গানে রাজেশ খান্না ও মুমতাজের নাচের শুটিং এখানে হয়েছে। এছাড়াও 'আন্দাজ' এবং 'কাশ্মীর কি কলি' ছবিতেও এই মন্দির দেখানো হয়েছে।