বাংলা নিউজ > টুকিটাকি > Ballygunge Government High School Teacher: কানমোলার ভয়ের কাছে হার মানে ক্যানসারও, সুস্থ হয়ে স্যর বলছেন ‘আমিই তো রাজা রে’

Ballygunge Government High School Teacher: কানমোলার ভয়ের কাছে হার মানে ক্যানসারও, সুস্থ হয়ে স্যর বলছেন ‘আমিই তো রাজা রে’

স্যরের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য চাঁদা তুললেন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররা। (প্রতীকী ছবি) (unsplash)

Ballygunge Government High School Teacher: ক্যানসারকে হারিয়ে দিতে পারে নিশর্ত ভালোবাসা। বালিগঞ্জ গর্ভনমেন্ট হাই স্কুলের শিক্ষক দেবব্রত চৌধুরীর ঘটনা আবারও সে কথা প্রমাণ করে দিল। প্রিয় মাস্টারমশাইকে সুস্থ করতে একজোট প্রাক্তন ছাত্ররা। কানমোলার ভয় কি অবশেষে কাটল?

এক সময়ে তাঁকে হাতঘড়ি খুলতে দেখলেই রক্ত জল হয়ে যেত ছাত্রদের। কার সময় এবার খারাপ যাবে? না জানি কী আসছে এর পরে! কানমোলা নাকি স্কেলের বাড়ি! এসবই বহু যুগ আগের ঘটনা। তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় ১৯ বছর। সেই মাস্টারমশাই এখন শয্যাশায়ী। ক্যানসারে আক্রান্ত। হাতই তুলতে হয় কষ্ট করে, ঘড়ি পরা তো দূরের কথা। 

বালিগঞ্জ গর্ভনমেন্ট স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক দেবব্রত চৌধুরী। প্রায় চার দশক এই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। বছর কুড়ি বয়সে এই স্কুলে চাকরি করতে এসেছিলেন ততকালীন কারিগরি শিক্ষা বিভাগে। সেই বিভাগ উঠে গিয়েছে। তার পর থেকেই অঙ্ক করাতেন। ২০০৪ সালে অবসর নেন সেখান থেকেই। 

দীর্ঘ চার দশকে স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্র পেয়েছেন প্রচুর। এমন বহু শিক্ষক-শিক্ষিকাই প্রচুর ছাত্রছাত্রীর সান্নিধ্য পান। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ক’জনই বা এমন জনপ্রিয় হন? ‘তা জনপ্রিয় হবেন না! কোনও ছাত্রের দরকার পড়লেই পাশে থাকতেন দেবব্রতবাবু। বিয়ে করেননি। বিরাট খরচের শখ-আহ্লাদও ছিল না। তাই উপার্জনের বড় অংশই খরচ করতেন ছাত্র, সহকর্মী আর পরিচিতদের সাহায্য করতে গিয়ে। খবর পেলেন, গরিব কারও কাছে জামাকাপড় নেই। নিজের নতুন জামা দিয়ে দিলেন। বইপত্র দিয়েও সাহায্য করতেন।’ বললেন স্কুলের বাংলার মাস্টারমশাই রাজীব কর। 

তবে সহকর্মীদের থেকেও বেশি করে তাঁকে নিজেদের স্মৃতি জড়িয়ে রেখেছেন ছাত্ররা। সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ‘স্যর আমাদের যে কত ভাবে সাহায্য করেছেন, আমাদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে ওঁর কতটা অবদান আছে, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।’ বললেন দেবব্রতবাবুর ছাত্র অরুণালোক ভট্টাচার্য। চিকিৎসক অরুণালোকবাবুর মতোই বালিগঞ্জ গর্ভনমেন্টের বহু প্রাক্তন ছাত্রই দেবব্রতবাবুর ভূমিকার কথা ভুলতে পারেননি। আর পারেননি বলেই অঙ্কের মাস্টারমশাই এখনও ‘একা’ নন। 

১৯৮৮ সালে স্কুল থেকে পাস করেছেন বিশ্বরঞ্জন নন্দী। দেবব্রতবাবুর অসুস্থতার কথা জানতে পেরে যাঁরা একেবারে গোড়ায় এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে বিশ্বরঞ্জনবাবু অন্যতম। ফোনে যখন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হল, কর্মসূত্রে তিনি দেশের বাইরে। প্রশ্ন শুনে বললেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে খবরটা পেয়েছিলাম, স্যর অসুস্থ। সঙ্গে সঙ্গেই আমরা খোঁজ নিতে শুরু করি। এপ্রিল মাসে জানতে পারি, মার্চ থেকেই নাকি উনি ক্যানসারে আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গে শঙ্খ (শঙ্খশুভ্র দাস)-র সঙ্গে যোগাযোগ করি। ও ডাক্তার। ওকে নিয়ে হাজির হই স্যরের বাড়ি।’

সকলের প্রিয় দেবব্রত স্যর তখন হারিয়ে ফেলেছেন শরীরের জোর। ফুসফুসের সংক্রমণে এতটাই কাহিল, বিছানায় উঠে বসার ক্ষমতা নেই। বিশ্বরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘স্যরের শরীর পুরো বিছানায় মিশে গিয়েছে। ওঁর ভাগনী দেখাশোনা করছিলেন। তাঁর অনুমতি নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। ঠিক হল, প্রাথমিক ভাবে ফুসফুসের সংক্রমণটা সারানো হবে। তার পরে দেখা যাবে।’

এর পরেই স্কুলের প্রাক্তনীদের গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে দেবব্রতবাবুর অসুস্থতার খবর। ফুসফুসের সংক্রমণ সাড়ে। ঠিক হয়, ছাত্ররা মিলেই চিকিৎসা করাবেন ক্যানসারের। হারানো হবে সেই অসুখকেও। টাকা তোলার ডাক দেওয়া হয়। বিশ্বরঞ্জনবাবু জানালেন, প্রথম দিনেই নাকি প্রায় চার-পাঁচ লক্ষ টাকা ওঠে। শুরু হয় চিকিৎসা। ক্রমে ক্রমে চার-পাঁচ লাখ পৌঁছে গিয়েছে ১১ লক্ষে। ‘এটাই প্রথম বার নয়। বালিগঞ্জ গর্ভনমেন্টের প্রাক্তনরা এসব বিষয়ে খুব সক্রিয়। যে কোনও দরকারে দেশের ছাত্ররা তো বটেই, বিদেশে বসবাস করা ছাত্ররাও হাত বাড়িয়ে দেন।’ জানালেন বর্তমান শিক্ষক রাজীববাবু। 

‘ধূমপানের অভ্যাস তো ছিলই। তবে সেটা ছেড়েও দিয়েছিলেন শুনেছি। কিন্তু তার সঙ্গে ক্যানসারের যোগ আছে কি না, তা জানি না। ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। এক সময় নিয়মিত যেতেন পাহাড়ে। আর গল্প করতেও ছিলেন ওস্তাদ। অকৃতদার মানুষটি কোনও টাকা জমাননি সেভাবে। আর তাই শুধু পেনশনের টাকায় চিকিৎসা করাতেও সমস্যা হচ্ছিল। সেই চিকিৎসাটাই সম্ভব হল ছাত্ররা এগিয়ে আসায়।’ বলছেন রাজীববাবু। 

জীবনের মেয়াদ কত দিন, তা নিশ্চয়ই ঠিক করে দিতে পারে না চিকিৎসাশাস্ত্রও। তারও ক্ষমতা এক সময়ে লক্ষণরেখার এপারে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু তবু মৃত্যুর চেয়েও যে জীবন কত বড়, তার প্রমাণ দেবব্রতবাবুর বেঁচে থাকা। হাসতে হাসতে বেঁচে থাকা। 

‘আমরা তো স্যরকে গিয়ে বলি, মনে আছে, আপনি হাতঘড়ি খুললে, কীভাবে আমরা ঠান্ডা হয়ে যেতাম? স্যর বলেন, লজ্জা দিস না। এখন হলে বোধহয় আর চাকরি থাকত না। আমার তো তেমনভাবে কেউ ছিল না। সেই আমিই এখন রাজা রে!’ বলেন বিশ্বরঞ্জনবাবু। কানমোলা আর স্কেলের বাড়ির ভয় কমেনি, তবে এত দিনে গা সওয়া হয়ে গিয়েছে তাঁদের। স্যরের হাতে ঘড়ি না থাকলেও তাঁরা জানেন, কারও সময় খারাপ যাবে না আর। বরং সামনের সময়টা ভালোই হবে। সেই আশাতেই স্যরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁরা। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররা। স্কুলের প্রাক্তন হলেও যাঁরা এখনও স্যরের প্রাক্তন নন, হতেও চান না কখনও। 

এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup 

বন্ধ করুন