মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা, তার পরই দোল। তবে করোনার চোখ রাঙানির কারণে বিগত কয়েক বছরের মতো এ বছর আর হোলি খেলায় মেতে ওঠা যাবে না। সে ক্ষেত্রে পরিবার ও চেনা পরিচিতির গণ্ডির মধ্যেই যথাযথ নিরাপত্তা বজায় রেখে রঙের উৎসবের আনন্দকে জিইয়ে রাখতে হবে। তাই তো প্রতিবছরের মতো এ বছরও দোল খেলার আগে ত্বক ও চুলের জন্য কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। যাতে ত্বকে অ্যালার্জি, জ্বালা না-হয় এমনকি চুল নষ্ট হওয়া থেকেও বাঁচানো যেতে পারে।
ভাবছেন কী ভাবে হোলির রঙের প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে বাঁচাবেন নিজের ত্বক ও চুলকে? মুশকিল আসান করতে হিন্দুস্থান টাইমস দুই জন ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলেছে। সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডার্মাটোলজি অ্যান্ড লেসার এসটেটিকার ড: বিবেক মেহেতা ও মেডি মেকওভারের ড: সুরুচি পুরীর কাছ থেকে জেনে নেওয়া হয়েছে হোলির রঙ থেকে ত্বক ও চুলের সুরক্ষার উপায়।
দোলের জন্য কী ভাবে প্রস্তুত করবেন নিজের ত্বককে?
ড: মেহেতা প্রথমে দোল উপলক্ষে জামা কাপড়ের ওপর নজর রাখতে বলেছেন। তিনি বলেন, হোলি খেলার জন্য এমন কাপড় পরা উচিত যা শরীরের অধিকাংশ অংশ ঢেকে রাখে। হাই-নেক বা ফুল স্লিভ জামাকাপড় পরে হোলি খেলতে বেরোতে পারেন। শরীরের যতটা অংশ কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকবে, হোলির রঙ তোলার চিন্তা ততটাই কমবে। শরীরের যে সমস্ত অংশ উন্মুক্ত থাকবে, সেখানে কোল্ড ক্রিম বা তেল লাগান। এর ফলে ত্বকে রঙ বসবে না। এ ছাড়াও ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিন লাগিয়ে দোল খেলতে বেরোন। সূর্যরশ্মিতে কেমিক্যাল যুক্ত রঙ দিয়ে হোলি খেললে ত্বকে খুব বেশি ট্যান পড়তে পারে। তাই সানস্ক্রিন লোশন লাগাতে ভুলবেন না। আবার ঠোঁটে, কানের পিছনে ও আঙুলের টিপে মোটা পরতের পেট্রোলিয়াম জেলি লাগান। আবার ড: পুরী জানিয়েছেন, রোদে বেরোনোর অনন্ত পক্ষে আধ ঘণ্টা আগে ৩০ বা তার চেয়ে বেশি এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন লাগানোর পর ময়শ্চারাইজার লাগান।
কী ভাবে তৈরি রাখবেন নিজের সংবেদনশীল ত্বককে?
অন্য দিকে সংবেদনশীল ত্বকের কারণে যদি কোনও অংশে চুলকানি বা জ্বালা অনুভব করেন, তা হলে শীগগির সেই স্থানটিকে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে দিন, এমনই জানিয়েছেন সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডার্মাটোলজি অ্যান্ড লেসার এসটেটিকার ড: বিবেক মেহেতা। ঠান্ডা জল দিয়ে ধুলে শীঘ্র জ্বালাভাব কমে যাবে। পরে প্রভাবিত স্থানে ক্যালামাইন লোশান বা গাঢ় ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। সারা দিন ধরে যাতে জল খাওয়ায় ঘাটতি না-থাকে, সে বিষয়টিও সুনিশ্চিত করতে বলেছেন তিনি। মনে রাখবেন, রঙে কেমিক্যাল থাকে, যা ত্বক থেকে ময়শ্চার শুষে নেয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে জল পান করে শরীরকে রি-হাইড্রেট করুন।
অন্য দিকে ড: পুরীর মতে, শুষ্ক ত্বকের সমস্যা হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে অলিভ অয়েল লাগান। শুষ্ক ত্বকে কেমিক্যাল যুক্ত রঙের কারণে অধিক জ্বালা ও অ্যালার্জি দেখা দেয়। তাই জল পানে যাতে কোনও ভাটা না-পড়ে, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছেন তিনি। চোখ ও চোখের আশপাশের অংশকে বাঁচাতে সানগ্লাস পরার পরামর্শ দিচ্ছেন ড: পুরী।
কী ভাবে নেবেন চুলের যত্ন?
দোল খেলার পর বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় রঙ পরিষ্কারের পালা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রঙ তোলার কাজে লেগে পড়ুন। রঙ পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ধুয়ে ফেলা ভালো। তবে ভেজা অবস্থায় ধুতে না-পারলেও ভয় পাবেন না। প্রথমে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে নিজের মুখের রঙ তোলার চেষ্টা করুন। এর পর সামুদ্রিক লবণ, গ্লিসারিন ও আরোমা অয়েলের মিশ্রণ লাগান মুখে। রঙে উপস্থিত কেমিক্যালের তীব্র প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে এটি ত্বককে রক্ষা করবে। উল্লেখ্য, এই মিশ্রণটি অ্যান্টি ব্যাক্টিরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল। রঙ তোলার জন্য ত্বককে সাবান দিয়ে ঘসবেন না। এমন করলে রঙ তো উঠবেই না, বরং ত্বকের আরও ক্ষতি হবে। ফেসিয়াল ক্লিনসার বা বেবি অয়েল লাগিয়ে রঙ তোলার চেষ্টা করুন। এর পর মুখ ধুয়ে নিয়ে বেশি করে ময়শ্চারাইজার লাগান। হোলির এক সপ্তাহ আগে ও পড়ে কোনও ধরণের ব্লিচিং, ওয়্যাক্সিং অথবা ফেসিয়াল করাবেন না। কারণ এর ফলে ত্বকের পোরগুলি উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং হোলির খেলার পর রঙের অবশিষ্টাংশ ত্বকের অন্তর্বর্তী স্তরে পৌঁছে যায়।
চাইলে, লেবুও নিজের ত্বকে ঘসতে পারেন। পাতিলেবুতে উপস্থিত প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদানগুলি রঙের স্টেনকে তুলতে সাহায্য করে, যা সহজে পরিষ্কার হয় না। তাই কিছুক্ষণ লেবু ঘসার পর জল দিয়ে সেটিকে পরিষ্কার করে দিন। এর পর ময়শ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না। তা না-হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
তবে এত শত ঝক্কি পোহাতে না-চাইলে এ বারের দোল হার্বাল রঙ দিয়ে খেলুন। বর্তমানে এমন রঙ সহজেই কিনতে পাওয়া যায়।