HT Bangla Exclusive: হার্টের বিরল অস্বাভাবিকতা নিয়েই জন্ম একরত্তি অদ্রিজের (নাম পরিবর্তিত)। প্রথম দিকে সবটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দুই মাস পর পরিস্থিতি গড়ায় চরমে। মাঝরাতে প্রাণসংশয়। দিশেহারা হয়ে পড়েন আট বছর অপেক্ষার পর মা-বাবা হওয়া প্রিয়াঙ্কা ও সমীর (নাম পরিবর্তিত)। ওই রাতেই হাসপাতালে ছুট। শেষমেশ যাঁদের অধীনে অদ্রিজের চিকিৎসা চলছিল, সেই চিকিৎসকরা সেদিনই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। জটিল সার্জারি, সামান্যতম ভুলেরও মাফ নেই। কিন্তু অভিজ্ঞ সার্জেন বলে কথা, তাঁদের হাতযশেই অবশেষে নতুন প্রাণ পেল একরত্তি।
আরও পড়ুন - ‘প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে গান শেখাতেন’ মিনুদিকে স্মরণ রবীন্দ্রগবেষক পীতম সেনগুপ্তর
বিরল কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ
জন্মগত হার্টের সমস্যা বা কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ নানা ধরনের হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়, কিছু জীবনযাপনের ধারাতেই বদল এনে দেয়। প্রাণ সংশয়কারী তেমনই এক জটিল সমস্যা হল পার্শিয়াল অ্যানোম্যালাস পালমোনারি ভেনাস রিটার্ন (Partial Anomalous Pulmonary Venous Return)। সম্প্রতি এই সমস্যা নিয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয় দুই মাসের দুধের শিশুকে।
সর্দি ও কাশির উপসর্গ
জন্মের পরই ডাক্তারদের চোখে পড়েছিল হার্টের অস্বাভাবিকতা। সর্দি ও কাশির উপসর্গ থেকেই ধরা পড়েছিল সমস্যা। কিন্তু তখনকার মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় মা ও সন্তানকে। কিছুদিন বাদেই ফের দেখা দেয় সমস্যা। মাঝরাতে হঠাৎই প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, মুখ নীল হয়ে যাওয়া, শিশুকে নিয়ে সদ্য বাবা-মায়ের হাসপাতালে দৌড়।
ঠিক কী ধরনের অস্বাভাবিকতা?
পরীক্ষা করে তখনই জানা যায়, হার্টের এই বিরল অস্বাভাবিকতার কথা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে PAPVR নামে পরিচিত এই হার্ট ডিফেক্টে ফুসফুস থেকে আসা শিরা হার্টের ডানদিকের প্রকোষ্ঠে (চেম্বারে) ঢুকে যায়। অথচ এই দুই শিরার বামদিকের প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করার কথা। বিপজ্জনক এই পরিস্থিতিতে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে থাকে ধীরে ধীরে। সঠিক সময়ে সার্জারি না হলে প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়।
আরও পড়ুন - ‘মাথার উপর মহীরুহের মতো ছিলেন’ সনজীদা-স্মরণ শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার
জটিল ও নিখুঁত অস্ত্রোপচার
বিএম বিড়লা হাসপাতালের চিকিৎসক শুভেন্দু মণ্ডল (পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়োলজিস্ট) ও চিকিৎসক শতরূপা মুখোপাধ্যায় (পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক ইনটেনসিভিস্ট) তখনই সিদ্ধান্ত নেন অস্ত্রোপচারের। কিন্তু একরত্তি শিশুর হার্টের এই ধরনের যথেষ্ট কঠিন। একটা সামান্যতম ভুলেই ঘটে যেতে পারে মারাত্মক ঘটনা। লিড (প্রধান) সার্জেন মনোজকুমার দাগার (সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জেন) নেতৃত্বে গোটা অস্ত্রোপচার নিরাপদে সম্পন্ন হয়। সার্জারি শেষে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসে শিশুটি।
হার্টের পাশাপাশি ফুসফুসেও সমস্যা
চিকিৎসক শুভেন্দু মণ্ডলের কথায়, ‘আমার ডাক্তারি জীবনে দেখা অন্যতম জটিল রোগ ও অস্ত্রোপচার ছিল অদ্রিজের অস্ত্রোপচার।’ আরেক চিকিৎসক শতরূপা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘এটা শুধু যে একটা শিশুর জীবন তা নয়, একটা পরিবারের ভবিষ্যতও জড়িয়ে ছিল এর সঙ্গে। ফলে নিঃসন্দেহে বড়সড় চ্যালেঞ্জ ছিল।’ চিকিৎসকদের কথায়, হার্টের পাশাপাশি ফুসফুসেই কিছু অ্যাবনর্মালিটি ছিল শিশুটির। যে কারণে অস্ত্রোপচার আরও কঠিন ছিল। তবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুটিকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা খুশি।