মস্তিষ্কের কোনও অংশের রক্ত পরিবহণ বাধার মুখে পড়লে বা কমে গেলে মস্তিষ্কের কলাগুলি নষ্ট হয়, তখন স্ট্রোক হয়ে থাকে। নানা জীবনযাপন প্রণালী স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মেদবহুলতা, নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন স্ট্রোকের জন্য দায়ী গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ।
তবে রক্তচাপ, হৃদরোগ, মধুমেহ, কোলেস্টেরল, মেদবহুলতা, ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করা কম করা, অবসাদ কমানো ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। প্রতিদিন এক্সারসাইজ এবং সুষম আহার গ্রহণের ফলেও সুফল লাভ করা যায়।
ফোর্টিস মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নিউরোলজি বিভাগের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর এবং নিউরোলজি বিভাগের প্রধান ড: প্রবীণ গুপ্ত জানিয়েছেন, বিশ্বে নানা রোগ ও মৃত্যুর শীর্ষ কারণ হল স্ট্রোক। নানা জীবনযাপন প্রণালী স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। খাদ্যাভ্যাসকেও এ ক্ষেত্রে বাদ দেওয়া যায় না বলে মতামত প্রকাশ করেছেন তিনি। এখন কিছু খাবার আছে, যা আমরা প্রতিদিন খেয়ে থাকি এবং সেগুলি আমাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে থাকে। এখানে এমন ৫টি খাবার সম্পর্কে জানানো রইল, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি কম করার জন্য এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
১. প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য- দিনের শুরু ও শেষ যদি জাঙ্ক ফুড দিয়ে করে থাকেন, তা হলে এখনই সাবধান হয়ে যান। কারণ আপনি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ড: প্রবীণ গুপ্তের মতে, ক্র্যাকার, চিপস, স্টোর থেকে কিনে আনা খাবার এবং ভাজা খাবারের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার বা জাঙ্ক খাবারে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাট থাকে। এর ফলে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা ধমনীতে জমে এবং ব্লকেজের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি শরীরে ইনফ্লেমেশানের কারণ। এই প্রদাহ বাড়তে থাকলে স্ট্রোক হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
২. স্মোকড ও প্রক্রিয়াজাত মাংস- স্মোকড ও প্রক্রিয়াজাত মাংসে সোডিয়াম নাইট্রাইটের মতো কিছু উপাদান থাকে, যা রক্তবাহিকার ক্ষতি করে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে অক্সিডেটিভ চাপ দেখা যায়, যা রক্তবাহিকার দেওয়াল ধ্বংস করে এবং কলাগুলিতে আঘাত হানে। হট ডগ, বেকন, সালামি এমনই কিছু স্মোকড ও প্রক্রিয়াজাত মাংসের উদাহরণ। নিজের খাদ্য তালিকায় এর উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই শ্রেয়।
৩. টেবিল সল্ট- এ ক্ষেত্রে প্যাকেটজাত খাবার ও টেবিল সল্টের কথা বলা হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক অপরিশোধিত নুন, যেমন হিমালয়ান নুন স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত নয়। খাবারের স্বাদবৃদ্ধিতে এই নুন ব্যবহার করা যায়। নুন রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা ধমনী, মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে। তাই দিনে নুন গ্রহণের পরিমাণ ৫ গ্রামের নীচে কমিয়ে আনলে রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমে আসতে পারে।
৪. ডায়েট সফট ড্রিঙ্ক- ড: গুপ্তের মতে, ডায়েট ড্রিঙ্ক অনেককেই আকৃষ্ট করে। অনেকের ধারণা একটি সোডায় যেহেতু ‘ডায়েট’-এর তকমা লেগে গিয়েছে, তাই এটি পান করা যেতে পারে। তবে নানা অধ্যয়নে ডায়েট সফ্ট ড্রিঙ্ক পান ও স্ট্রোক ও ভাসকিউলার রোগের মধ্যে সংযোগ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ৯ বছর ধরে ২৫০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিদের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, যাঁরা প্রতিদিন ডায়েট সোডা পান করেছেন তাঁদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক অথবা এ কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনা যাঁরা খুব কম বা এক্কেবারেই সোডা পান করেন না তাঁদের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। তাই এ ধরনের খাবার এড়িয়ে গেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো যাবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন সম্ভব হবে।