ডায়াবিটিস কী? যদি আপনাকে এই প্রশ্ন করা হয় তাহলে আপনার উত্তর কী হবে? এটা আদতে একটি বিপাকীয় রোগ। মানবদেহে অস্বাভাবিক এবং অদ্ভুত কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনের কারণে বিপাক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটলে, অথবা যে পদ্ধতির মাধ্যমে শরীর খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে তাতে বাধা পড়লে এই রোগ হয়। এর ফলে আমাদের সুস্থ থাকার জন্য যা যা দরকার তার কিছু জিনিস হয় কম থাকে অথবা বেশি। অর্থাৎ ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যায়।
আর ডায়াবিটিস হওয়া মানেই রক্তের সুগার লেভেল বেড়ে যাওয়া। মানবদেহে এক ধরনের হরমোন আছে, যার নাম ইনসুলিন। এই ইনসুলিন রক্ত থেকে সুগারকে কোষে পাঠায় এবং সেখানে সঞ্চয় করে রাখে পরবর্তী সময়ে এনার্জির দরকার হবে সেখানে থেকে যাতে ব্যবহার করা যায় তার জন্য। কিন্তু যাঁদের ডায়াবিটিস থাকে, তাঁদের শরীরে হয় ঠিক মতো ইনসুলিন তৈরি হয় না, অথবা সেটা ঠিক করে কাজ করতে পারে না।
দীর্ঘদিন যদি এই রোগের চিকিৎসা না করা হয় তাহলে একাধিক রোগ হতে পারে যা আপনার একাধিক অর্গ্যানকে নষ্ট করে দিতে পারে পাকাপাকি ভাবে। ধীরে ধীরে ভারতে এই রোগটি ভয়াবহ ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এবং মোট ডায়াবিটিস রোগীর মধ্যে ৮.৭ শতাংশ রোগীর বয়স হচ্ছে ২০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যেই। ব্যাপক হারে ভারতে ডায়াবিটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, এর কারণ হিসেবে নগরায়ন, সঠিক জীবন যাপন না করা, সঠিক খাবার না খাওয়া, মদ্যপান এবং ধূমপানের অভ্যাস থাকাকেই দায়ী করা হচ্ছে।
কিন্তু আপনি জানেন কি বিভিন্ন ধরনের ডায়াবিটিস আছে?
টাইপ ২ ডায়াবিটিস রোগে শরীরে ইনসুলিন ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। শরীর চর্চা না করা এবং অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া হচ্ছে এই ধরনের রোগের মূল কারণ।
টাইপ ১ ডায়াবিটিস মূলত শিশুদের হয় যা কখনই আর ঠিক করা যায় না। এই ক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিন কম তৈরি হয়।
গর্ভকালীন ডায়াবিটিস মূলত গর্ভাবস্থা থাকাকালীনই হয়ে থাকে যার ফলে নানান জটিলতা তৈরি হতে পারে ডেলিভারির সময়। এই ধরনের ডায়াবিটিসের তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। তবে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে।
কী করে বুঝবেন যে আপনার ডায়াবিটিস হয়েছে?
১. অতিরিক্ত জল তেষ্টা পাবে
২. প্রচণ্ড খিদে পাবে
৩. বারবার বাথরুম যেতে হতে পারে
৪. রাতে বারবার বাথরুম যেতে হবে
৫. কোনও কারণ ছাড়াই ওজন কমে গেলে
৬. কম এনার্জি এবং সহজেই বিরক্ত হবেন
৭. ক্ষত সারতে সময় লাগবে
৮. দেখতে সমস্যা হবে
৯. ডায়াবিটিক ফুটের সমস্যা
এছাড়াও কমতে পারে যৌন চাহিদা, দুর্বল হতে পারে মাংসপেশি, ইত্যাদি।
ডায়াবিটিসের প্রভাব কী হতে পারে?
১. যাঁদের ডায়াবিটিস থাকে তাঁদের হার্টের রোগের সমস্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মূলত, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওরের সমস্যা দেখা দেয়।
২. নার্ভের ক্ষতি করে। কমিয়ে দেয় রক্ত চলাচল।
৩. দৃষ্টিশক্তি কমে যায় ডায়াবিটিস হলে। রেটিনার কাছে যে সূক্ষ্ম স্নায়ুগুলো আছে সেগুলোর পাকাপাকি ক্ষতি হতে পারে।
৪. কিডনির ক্ষতি হয়, এমনকী ফেইলিওর অবধি হতে পারে।
কী করে বাঁচাবেন নিজেকে?
ডায়াবিটিস কখনও সারানো যায় না। তাই আগে থেকেই সচেতন হন, এবং দেখে নিন কোন উপায়ে ডায়াবিটিসকে আপনার থেকে দূরে রাখতে পারবেন।
১. ঠিকঠাক ওজন মেনটেন করুন।
২. প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
৩. সঠিক খাবার খান যার পুষ্টিগুণ ভালো, পারলে মিষ্টি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪. ধূমপান কমান, এই বদঅভ্যাস শুধু ডায়াবিটিস ঘটায় এমন নয়, হার্টের অসুখও বাধায়।