হৃদরোগ, ফ্যাটি লিভার ও ডায়াবিটিসের মতোই বর্তমানে কিডনির সমস্যা অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। সারা বিশ্বজুড়ে ষষ্ঠ বৃহত্তম মারণ রোগ হল ক্রণিক কিডনি রোগ।
বেশকিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কিডনির সমস্যা থেকে মৃত্যুর হার গত শতাব্দীর তুলনায় বেড়ে গিয়েছে ৪১ শতাংশ। ভারতে প্রতি মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৮০০ জনের ক্ষেত্রে দেখা যায় কিডনির সমস্যা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে যা ডেকে আনতে পারে অঙ্গবৈকল্য থেকে মৃত্যুর মতো পরিনতি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনির সমস্যা থাকলে ডায়েট খুব নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। শরীরের সমস্ত রক্ত কিডনির মাধ্যমেই পরিশ্রুত হয়ে সারা শরীরে পৌছায়। কিডনির সমস্যা দেখা দিলে মূলত এই পরিশোধনের পদ্ধতিতেই বাধা তৈরি হয়।
মূলত প্রোটিন, সোডিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়ামযুক্ত খাবার এই ক্ষেত্রে কিডনি বেশি পরিশ্রুত করতে পারে না। কিডনির সমস্যা দেখা দিলে তাই ডায়েটে নানারকম পরিবর্তন আসে। খনিজ পদার্থ রয়েছে এমন সব খাবারই খাদ্যতালিকায় সীমিত পরিমাণে রাখতে হয়। ক্রনিক কিডনির সমস্যায় পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সোডার মধ্যে ফসফরাস থাকার কারণে সোডাও না খাওয়াই ভালো। এর পাশাপাশি রোজকার ডায়েটে কমিয়ে দিতে হয় দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য। দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের মূল উপাদান হল প্রোটিন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। কিডনি ভালো থাকলে দুগ্ধজাত খাবার হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। ক্রনিক কিডনির সমস্যায় এর বিপরীত ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ হাড় দুর্বল হয়ে যায়। তাই বেশি পরিমাণে দুগ্ধজাত খাবার খেতে চিকিৎসকরা বারণ করেন।
তবে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা এক অভিনব মত জানাচ্ছে। বিশাল সংখ্যক মানুষের উপর করা এই সমীক্ষায় দেখা যায়, উচ্চ ফ্যাটের দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য নিয়মিত খেলে কিডনির রোগের আশঙ্কা কমে। নিয়মিত দুগ্ধজাত দ্রব্য খেলে কিডনির স্বাস্থ্য ভালোই থাকে।
তবে বিশেষজ্ঞদের কথায়, এই দাবি কিডনির সমস্যা রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যারা আগে থেকেই কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের অতিরিক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
প্রোটিনের পাশাপাশি দুগ্ধজাত দ্রব্যে থাকে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, চেন ফ্যাটি অ্যাসিড ও বায়োঅ্যাক্টিভ পেপটাইড। গবেষকদের ধারণা, এই উপাদানগুলোই সুস্থ মানুষের কিডনির কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
তবে কিডনির সমস্যা একবার দেখা দিলে খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাবার সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের কথায়, ক্রনিক কিডনির সমস্যার খারাপ পর্যায়ে কিডনি খুব ধীরগতিতে কাজ করে। এই সময় ডায়েটে এই খাবার রাখলে বিপরীত ফল হতে পারে।