মধ্যপ্রদেশের মোরেনা এলাকায় বাটেশ্বর মন্দিরকে ঘিরে রেখেছে এক পাহাড়ি উপত্যকা। এই চম্বল-উপত্যকায় এককালে ছিল কুখ্যাত ডাকাতদের ডেরা। জায়গার নামকরণ ‘মোরেনা’ হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে, এলাকা জুড়ে ‘মোর’ (হিন্দি শব্দ) বা ময়ূরের আধিক্যের কারণ। অত্যন্ত শান্ত, নির্জন এই পাহাড়ি উপত্যকার কোলে মোরেনার বাটেশ্বর মন্দির। এলাকায় ঢুকলেই পাখিদের রব আর মন্দির চত্বর জুড়ে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI)র তাক লাগানো কর্মকাণ্ড দেখা যায়। শোনা যায়, ১২০০ বছরের পুরনো এই বাটেশ্বর মন্দির চত্বর। আর তাকে পুনরুদ্ধার করতে একটা সময় ASI-কে মুখোমুখি হতে হয়েছিল চম্বল উপত্যকার কুখ্যাত ডাকাতদলের। কী ঘটেছিল সেই সময়?
মোরেনার বাটেশ্বর মন্দির:-
মোরেনার বাটেশ্বর মন্দির, মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়ার থেকে প্রায় ১ ঘণ্টার রাস্তা। নিস্তব্ধ এই এলাকায় বাটেশ্বর মন্দির চত্বরে রয়েছে হাজার বছরের পুরনো ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০ মন্দির। এককালে যা ছিল খণ্ড অবস্থায়। ২৫ একর এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাটেশ্বর মন্দির, ১৯২৪ সালে ‘প্রোটেকটেড মনুমেন্ট’ হিসাবে ঘোষিত হয় এএসআই-র দ্বারা। জানা যায়, এই এলাকায় তৈরি এমন মন্দির, গুর্জর-প্রতিহার বংশের আমলের। এই মন্দির পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করছিল এএসআই। তবে, সেই সময় এলাকায় পোক্ত আস্তানা ছিল চম্বল উপত্যকার ডাকাতদের। ফলত, এই পুরুদ্ধারের প্রক্রিয়া বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
চম্বল উপত্যকা, ডাকাত ও এএসআই… হাড়হিম করা কাণ্ড:-
এই মন্দির চত্বর পুনরুদ্ধার করতে গেলে ডাকাতদের সহযোগিতা যে দরকার তা বুঝেছিল এএসআই কর্তৃপক্ষ। ডাকাত ঘেরা চম্বলের এই এলাকায় এএসআই-র টিমের পরিদর্শনও বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছিল। তৎকালীন সময় এএসআই-র ভোপাল সার্কেলের সদস্য ছিলেন প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ কেকে মহম্মদ।

এক মিডিয়া রিপোর্টে সেই সময়ের ঘটনা ঘিরে কেকে মহম্মদের বক্তব্য উঠে আসে। কেকে মহম্মদ বলছেন,'২০০৪ সালে যখন আমি প্রথমবারের মতো নির্ভয় গুজ্জরকে দেখি, তখন সে মন্দির কমপ্লেক্সের সিঁড়িতে বিড়ি খাচ্ছিল।' পরে কেকে মহম্মদের এক সহযোগী তাঁকে জানান যে, সেই ধূমপানরত অবস্থায় থাকা ব্যক্তিই এলাকার ত্রাস 'ডাকু' নির্ভয় গুজ্জর। এরপর কুখ্যাত ডাকাত সর্দার নির্ভয় গুজ্জরের কাছে এএসআই আবেদন জানায়, এই মন্দির পুনরুদ্ধারের সহযোগিতার জন্য। কেকে মহম্মদ বলছেন,' আমি কোনওভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলাম এবং গুজ্জরকে মন্দিরটি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। আমি তাকে বলেছিলাম যে এই কমপ্লেক্সটি নবম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে গুর্জর-প্রতিহার রাজবংশের তার পূর্বপুরুষদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।' সেদিন সেই কুখ্যাত ডাকাত নির্ভয়ের মুখেমুখি হয়ে এএসআই কর্তা কেকে মহম্মদের তরফে সাহায্যের অনুরোধ, এক বিরল ঘটনার সাক্ষী করে তুলেছিল পাহাড় ঘেরা চম্বল উপত্যকাকে। সাহায্যে সায় দিয়েছিল ডাকাতদল। যে ঘটনা এই পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এরপর সেই জায়গায় এএসআই-র তাবড় কর্মকাণ্ড শুরু হয়। ধীরে ধীরে হাজার বছরের পুরনো মন্দির চত্বর তার চেনা রূপ পেতে শুরু করে।


‘মানি কন্ট্রোল’র এক রিপোর্টে কেকে মহম্মদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, শোনা যেত, এই মন্দিরের কাজ কেমন চলছে, তা দেখতে নাকি গা ঢাকা দিয়ে ছদ্মবেশে আসত ডাকাত নির্ভয় গুজ্জর। প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে নির্ভয় গুজ্জরের মৃত্যু হয় পুলিশ এনকাউন্টারে। এদিকে, ২০২৫ সালে এসেও এএসআই-র এই বিপুল কর্মকাণ্ড চলছে বাটেশ্বর মন্দির চত্বর জুড়ে। এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, এই মন্দির চত্বর থেকে টুকরো পাথরও ঘরে নিয়ে যাওয়া অশুভ বলে মনে করা হয়। আর এমন এক বিশ্বাস এলাকা জুড়ে রয়েছে। এরই মাঝে খণ্ড খণ্ড অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে ফের পুরনো চেহারায় ফেরার প্রক্রিয়ায় রয়েছে মোরেনার বাটেশ্বর মন্দির।