পুতিনের বিরুদ্ধে একজন কমেডিয়ান, যিনি কি না আবার রাষ্ট্রপতি! অনেকটা এভাবেই অনেকে অবজ্ঞা করেছিলেন ভলোদিমির জেলেনস্কিকে। আর যাই হোক, বিশ্ব রাজনীতিতে ভলোদিমির আর ভ্লাদিমিরের কি ফারাক সেটি সবাই জানেন। রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ আর সপ্তম দিনে পড়ল। তবে সবাই যে রকম বলেছিল, সে রকম কিন্তু হয়নি। ইউক্রনের রাষ্ট্রপতি পালিয়েও যাননি আবার বেঘোরে প্রাণও হারাননি। মাঝখান থেকে কূটনীতিক চালে বিশ্ব জুড়ে অনেকটা সহানুভূতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। নেটো না হোক, এই সাত দিনের মধ্যে কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে ইউক্রেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়েছে।
যুদ্ধের ইঙ্গিত পেয়েই জেলেনস্কি সমগ্র ইউক্রেনবাসীকে মর্মস্পর্শী আবেদনে জানিয়েছিলেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধ চায় না কিন্তু যদি যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে পালিয়ে নয়, সামনে থেকে যুদ্ধের মুখোমুখি হবে ইউক্রেন। রাশিয়ার আক্রমণের প্রথম দিন জেলেনস্কি মার্শাল আইন ঘোষণা করেন ইউক্রেনে। একদিকে যখন রাশিয়া স্থলে, আকাশে আর জলে আক্রমণ হানিয়েছে, ইউক্রেন রাষ্ট্রপতি বীরদর্পে রাশিয়ান সৈন্যের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন।
যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন, একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেন যেখানে রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে এসে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, তিনি এবং তার পরিবার দেশেই থাকবেন, দেশ ছাড়া অন্যত্র যাওয়ার অভিপ্রায় তার নেই। নিজেকে প্রতিপক্ষের প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করে দেশবাসীর সামনে নিজেকে কিছুটা ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ হিসেবে তুলে ধরেন।
যুদ্ধের তৃতীয় দিন, জেলেনস্কি আমেরিকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে, কিয়েভ ছেড়ে যাবেন না। এও জানান যে তিনি অস্ত্র চান, পালাতে চান না। যুদ্ধের চতুর্থ দিন পুতিনের কড়া সমালোচনা করে বলেন যে, রাশিয়ান সৈন্যরা ইউক্রেনের সাধারণ মানুষকে নিশানা বানাচ্ছে। এছাড়া আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে সামনের দিনে আরও বেশি ইউক্রেনের শহরের উপর আক্রমণ শানানো হবে।
পঞ্চম দিন যখন বেলারুশে রাশিয়ান ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের আলোচনা নিষ্ফলা হয়, নিজে সৈন্যবাহিনীর জলপাই পোশাকে এসে বলেন যে, তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ষষ্ঠ দিন বড় কূটনৈতিক সাফল্য পায় ইউক্রেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হয় জেলেনস্কির ইউক্রেন। তার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলিকে বলেন যে তারা যেন প্রমাণ দেয় যে, তারা ইউক্রেনের পাশে আছে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইতে সাহায্য করবে। সপ্তম দিনে জেলেনস্কি রাশিয়াকে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেন আলোচনা এগোনোর জন্য। এছাড়াও স্পষ্ট করে দেন যে যুদ্ধ হওয়ার জন্য তাঁর এবং পুতিনের কথা হওয়া কতটা জরুরি।
বলাই বাহুল্য, রাশিয়া ইউক্রেনের থেকে কয়েক গুণ বেশি শক্তিধর এবং তার সঙ্গে ধারে ভারে সব দিক থেকেই অনেক অভিজ্ঞ। কিন্তু ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনস্ বুদ্ধিমত্তা ও নিজের জনসংযোগ দিয়ে আপেক্ষিক ভাবে হলেও নিজের ও নিজের দেশের দিকে সহানুভূতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন।