শীতের ভোর। কুয়াশা কয়েক হাত দূরের পৃথিবীকে দেখতে দেবে না, এমনটাই ঠিক করে রেখেছে। এই অবস্থায় মর্নিং ওয়াক করতে করতে হঠাৎ দেখা গেল, রাস্তার ধারে আবর্জনার মধ্যে একটা ৭-৮ বছর বয়সি বাচ্চা। উপুড় হয়ে ময়লা কুড়িয়ে চলেছে। প্লাস্টিকের বোতলই মূল লক্ষ্য। এক বয়স্ক ব্য়ক্তি পাশ কাটাতে গিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘কী রে বাবু, ঠাণ্ডা লাগছে না?’ ছেলেটার উত্তর, ‘পেটের ভিতর আগুন তো’ বলেই খিল খিল হাসি। মুখের উপর মোক্ষম উত্তর দিতে পারার হাসি। বা হয়তো যন্ত্রণা। মোক্ষমই বটে। মানুষের বর্জ্য মানুষেরই পেটের জোগানদার। গোটা বিশ্বে প্রতি বছর ৩৫০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩৫ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি করে মানুষ। এরই খানিক কুড়িয়ে আগুন নেভাচ্ছে বাচ্চাটা।
মানুষের বর্জ্য়ই মানুষের ভব্যিষত?
প্লাস্টিক বর্জ্যই শুধু ৩৫ কোটি টন। পরিসংখ্যান বলছে, আগামী দিনে এর সংখ্যা আরও বাড়বে বৈ কমবে না। পৌঁছাতে পারে বিলিয়নের ঘরেও। প্লাস্টিক বর্জ্য ছাড়াও মানুষ আরও নানারকম বর্জ্য় উৎপাদন করে। রোজকার সেইসব পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য একসঙ্গে জুড়লে পরিমাণটা ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি টন। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা আগামী ২৫ বছরে অর্থাৎ ২০৫০ সালের শেষে এই পরিমাণ ৭০ শতাংশ বেড়ে যাবে। মানুষের বর্জ্য নানাভাবে দূষিত করে পৃথিবী। বিষ কখনও বায়ুতে ছড়াচ্ছে, কখনও জলে মিশছে, কখনও বা গেঁথে যাচ্ছে মাটির বুকে।
নিজের গলা টিপছি না তো?
দূষণ এতটাই, যে শীতকালে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাতাসের গুণমান পরিমাপক একিআই বিপদসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে বয়স্ক ও শিশুদের ভিড় পাকিস্তানের মতো বেশ কিছু দেশে। দিল্লি, কলকাতার মতো শহরগুলির অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হয়ে উঠছে। এর মধ্যে কি আদৌ মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব? ‘জীবন’-এর শেষে স্থান নিচ্ছে প্রশ্নচিহ্ন।
বছর শুরুর অঙ্গীকার
এই প্রশ্নচিহ্ন তোলার দায় দিনের শেষে মানুষেরই। অন্যদের হারিয়ে বেঁচে থাকার কায়দা রপ্ত করেছে মানুষ। যুগে যুগে এটাই ছিল মানুষের সভ্যতা গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। সহাবস্থানের নীতি ভুলে গিয়েছে ধীরে ধীরে। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গেও একই আচরণের ফল হতে পারে মারাত্মক। তার আভাস, ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে। পরিবেশ রক্ষার প্রতি আরও অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে ওঠা ছাড়া এখন করণীয় কিছুই নেই। HT বাংলার পাঁচ বছরে পাঠকদের সঙ্গে এই একই অঙ্গীকার আবদ্ধ হলাম আমরাও।