Sahitya Akademi Award: গত বছরই ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেয়েছিল বাঙালির গর্বের ভাষা। আর এই বছর সেই ভাষাতেই এল না সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার। তাও দীর্ঘ ৫২ বছর পর ঘটল এমন ঘটনা। কিন্তু ঠিক কী কারণে বাংলা ভাষায় এই বছর কোনও পুরস্কার এল না? সংবাদ মাধ্যমের তরফে সাহিত্য অ্যাকাডেমির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘টেকনিকাল ত্রুটি’র কথা বলে ফোন রেখে দেন। এমনকি সাহিত্য অ্যাকাডেমির সেক্রেটারি কে শ্রীনিবাস রাওয়ের থেকেও একই উত্তর মেলে। কিন্তু কী সেই টেকনিকাল ত্রুটি? কেন তা নিয়ে এতো রাখঢাক? এই ত্রুটির তত্ত্বতালাশ করতে গিয়েই একাধিক জুরি ও সাহিত্য অ্যাকাডেমির সঙ্গে জড়িত লেখক-সাহিত্যিকদের বক্তব্য শুনল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।
যেভাবে হয় মনোনয়ন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বর্ষীয়ান প্রাবন্ধিক (তিনি সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ও জুরি বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য) হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বলেন, ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমির কাছে প্রতি বছর কিছু বইয়ের একটি প্রাথমিক তালিকা পাঠানো হয়। সেই তালিকা সাহিত্য অ্যাকাডেমির পরামর্শদাতা কমিটির (অ্যাডভাইসারি কমিটি) কাছে যায়। সেখানে মনোনয়নের পর অ্যাকাডেমিনিযুক্ত তিন ব্যক্তির জুরি বোর্ডের কাছে যায় তালিকা। এই ধাপেই চূড়ান্ত মনোনয়ন হয়। নির্বাচিত হয় পুরস্কারপ্রাপক বইটি।’
আরও পড়ুন - Swapnamoy Chakraborty: বাংলা সাহিত্যে ‘স্বপ্নময়’ দিন, সাহিত্য অ্যাকাডেমি সম্মান পেলেন বর্ষীয়ান সাহিত্যিক
সম্ভাব্য তিনটি কারণ
ওই বর্ষীয়ান প্রাবন্ধিকের কথায়, ‘তিনটি কারণে এমন টেকনিকাল ত্রুটি হতে পারে। এক, এই বছর হয়তো কোনও জুরি বোর্ড গঠন করাই হয়নি। সাহিত্য অ্যাকাডেমির কাছে প্রাথমিক তালিকা থেকে মনোনীত কোনও বই পাঠায়নি অ্যাডভাইসারি কমিটি। দুই, জুরি বোর্ড হয়তো গঠন হয়েছে। কিন্তু কোনও বৈঠক হয়নি তাদের ব্যক্তিগত সমস্যার জেরে। তিন, জুরি বোর্ডের এক বা একাধিক ব্যক্তি হয়তো সরে দাঁড়িয়েছেন। এই তিন ক্ষেত্রেই সেই বছরের পুরস্কার টেকনিকাল ত্রুটি দেখিয়ে বাতিল করা হতে পারে। তবে বিকল্প উপায়ও রয়েছে।’
সম্ভাব্য টেকনিকাল ত্রুটি
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, কোনও এক প্রবীণ জুরি শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ানোয় কোনও বই চূড়ান্ত মনোনয়ন পায়নি এই বছর। তাঁর সরে দাঁড়ানোর প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে দুটি কারণ থাকতে পারে। এক, তিনি যে বই মনোনীত করেছেন, তা অন্যদের মনোনয়নে নেই। অথবা অন্যরা যে বই মনোনয়ন করেছেন, তা মনোনয়ন করতে তাঁর ঘোর আপত্তি ছিল। জুরি বোর্ডের বৈঠকে পরামর্শ দিতে পারেন নির্দিষ্ট ভাষার কনভেনর। কিন্তু ভোটাভুটিতে তিনি থাকেন না। প্রসঙ্গত, এই বছর সাহিত্য অ্যাকাডেমির বাংলা ভাষার কনভেনর ব্রাত্য বসু। কিন্তু হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে ফোনে পাওয়া যায়নি। সাধারণত জুরি বোর্ডের তিনজনের বৈঠকে ২-১ ভোটে কোনও একটি বই নির্বাচিত হয় পুরস্কারের জন্য। কিন্তু কোনও একজন শেষ মুহূর্তে না থাকলে ভোটাভুটিতে ২-০ বা ১-১ প্রক্রিয়ায় কোনও বই নির্বাচিত হয় না। এক অর্থে এটিও টেকনিকাল সমস্যা বা ত্রুটি। সম্ভবত, যার জেরে এই বছর পুরস্কার বাতিল হয়ে থাকতে পারে।
আরও পড়ুন - সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্রাত্য বসু
কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত?
তবে ওই বর্ষীয়ান প্রাবন্ধিকের মন্তব্য, ‘শেষ মুহূর্তে কেউ সরে দাঁড়ালে সাহিত্য অ্যাকাডেমির তরফ থেকে অন্য এক জুরিকে মনোনীত করার বিকল্প থাকে। আমার অভিজ্ঞতা অন্তত তাই বলছে। এক্ষেত্রে কেন তা করা হল না, সেটাও একটা প্রশ্ন।’ প্রসঙ্গত, এই বছর চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় এক রাজনৈতিক নেতার বই ছিল বলেও জানা গিয়েছে। সেক্ষেত্রে কি কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত কোনওভাবে ভূমিকা নিয়েছে বাংলা ভাষার সাহিত্য অ্যাকাডেমি না-পাওয়ায়?
পরামর্শদাতা কমিটির দুজনের কথায়
সাহিত্য অ্যাকাডেমির বর্তমান (২০২৩-২০২৭) পরামর্শদাতা কমিটির দুজনের সঙ্গে কথা বলেছে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লেখকের কথায়, ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমির পরামর্শদাতা কমিটির কাছে পুরস্কারসংক্রান্ত কোনও তালিকা আসে না। ফলে এই বিষয়ে কিছু বলাও মুশকিল।’ প্রাবন্ধিকের বক্তব্য তুলে প্রশ্ন করা হলে ওই লেখক জানান, ‘সম্ভবত তিনি যখন বোর্ডে ছিলেন, তখন এই নিয়ম ছিল। কিন্তু আমি যতদূর জানি, এখন তা আর নেই।’ অন্য আরেক সদস্যের কথায়, ‘অ্যাডভাইসারি কমিটির বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হবে, তা লিখিত আকারেই থাকে। এই কমিটিতে পুরস্কার নিয়ে কোনও আলোচনা হয় না। আর জুরি বোর্ডে বাইরে থেকেও সদস্য নেওয়া হয় কখনও কখনও। সবসময় অ্যাডভাইসারি কমিটি থেকে সদস্য নাও নেওয়া হতে পারে।’