Science News: ৬০ বছরে এক লাখ ভূমিকম্প। অর্থাৎ অঙ্কের হিসেবে প্রতি বছর দেড় হাজারেরও বেশি। আরেকটু হিসেব করলেই দেখ যাবে প্রতি দিন অন্তত তিনটি করে ভূমিকম্পের সাক্ষী হচ্ছে মহারাষ্ট্রের কয়না অঞ্চল। মহারাষ্ট্রের সাতারার নিকটে অবস্থিত কয়না মূলত কয়না নদী ও নদীবাঁধের জন্য খ্যাত। তবে খ্যাতির আরেক কারণ এই অঞ্চলের ঘন ঘন ভূমিকম্প। কম্পনের মাত্রা অনেকটাই কম বলে কোনও বড় ক্ষতির সম্মুখীন হন না স্থানীয় বাসিন্দারা। সম্প্রতি এই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাটি নিয়ে বাঙালি গবেষকের গবেষণাই স্বীকৃতি পেল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে।
ভূমিকম্পের রাসায়নিক কারণ
আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ফিজিক্স অ্যান্ড কেমিস্ট্রি অব থ্য আর্থ’-এ প্রকাশিত হয়েছে বীরবল সাহানি ইনস্টিটিউট অব প্যালিওসায়েন্সেসের পিএইচডি পড়ুয়া পিয়াল হালদারের গবেষণা। কয়না ওয়ার্না অঞ্চলে মাটির মাত্র দেড় কিলোমিটার নিচে জল থাকার কারণে ঠিক কী ঘটছে, তা গবেষণায় তুলে ধরেছেন পিয়াল। কেন কয়না এত ভূমিকম্পপ্রবণ, তার রাসায়নিক ব্যাখ্যা দিয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র।
আরও পড়ুন - ‘কৌলিন্য হারিয়েছে সাহিত্য অ্যাকাডেমি’ বিস্ফোরক শেষবারের প্রাপক স্বপ্নময়
গত ৬০ বছরে ভূমিকম্পের হার
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬০ বছরে এই অঞ্চলে ১-২ কম্পনমাত্রাযুক্ত ১ লাখ ভূমিকম্প হয়েছে। এছাড়াও, ৪ কম্পনমাত্রাযুক্ত ২২০ টি ভূমিকম্প ও ৫-এর বেশি মাত্রাযুক্ত ২৬টি ভূমিকম্প হয়েছে। কয়না ওয়ার্না অঞ্চলে দুটি বড় নদী বাঁধ রয়েছে। ভূগর্ভস্থ জলের কারণে পৃথিবীর নানা স্থানেই ভূমিকম্প হয়। তা মধ্যে অন্যতম মহারাষ্ট্রের এই অঞ্চল। যাকে ভুগর্ভস্থ জলজনিত ভূমিকম্পের হটস্পটও বলা হয়।
ফল্ট জোনের যে ‘ফল্ট’ হচ্ছে সবসময়
গবেষণাপত্র অনুযায়ী, মাটির মাত্র দেড় কিলোমিটার নিচে জল জমে থাকছে ফল্ট জোনে। ভূতত্ত্বের পরিভাষায়, দুটি শিলাস্তর সংঘর্ষের কারণে উঁচুনিচু হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করলে মাঝামাঝি ঐই সংযোগস্থলকে বলা হয় ফল্ট জোন। পিয়ালের গবেষণা অনুযায়ী, ওই অঞ্চলে জমে থাকা জল কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। যার জেরেই প্রতি দিন ভূমিকম্প হচ্ছে ওই এলাকায়।
‘কাদায় ফসকে যাচ্ছে…’
ক্লোরাইট ও এপিডোট নামের বিশেষ দুটি যৌগের সঙ্গে বিক্রিয়া করছে জমে থাকা জল। জল মানেই হাইড্রোজেন। এদিকে ক্লোরাইট যৌগে একটি অক্সিজেন একা পড়ে থাকে। অক্সিজেনটি জোট বেঁধে জলকে ধরে রাখে। ফলে তৈরি হয় একধরনের কাদা-কাদা পিচ্ছিল পদার্থ যা পাথুরে স্তরে স্থির থাকতে দেয় না। এপিডোটও সেই এক কাজ করে। দুজনেই সবুজ দেখতে। তবে এপিডোট অনেক বেশি পিচ্ছিল করে দেয় সংযোগস্থল বা ফল্ট জোন। ভূতত্ত্বের পরিভাষায় বাড়িয়ে দেয় ‘ফল্ট স্লিপ’। অন্যদিকে ক্লোরাইট করে ‘ফল্ট স্লিপ’ কমিয়ে দেয়। এর ফলে কী হয়? গবেষকের দাবি, দুই বিপরীত শক্তির কারণে পাথরের স্তর দুটি ফল্ট জোন বরাবর যতটা ওঠানামা করতে পারত, ততটা ওঠানামা করতে পারে না। তার থেকে ধীর গতিতে করে। এর ফলে মাটির উপরে ভূমিকম্পের প্রবণতা অনেকটাই কম হয়।
আরও পড়ুন - কোন ‘টেকনিকাল ত্রুটি’তে এই বছর বাতিল বাংলার সাহিত্য অ্যাকাডেমি? খোঁজ HT বাংলার
আদতে উপকার কয়না অঞ্চলবাসীদের!
দিনে অন্তত তিনবার ভূমিকম্প। এমন পরিবেশে থাকতে হলে পিয়ালের দাবি, এতে আদতে কয়না অঞ্চলের বাসিন্দাদের লাভই হচ্ছে। কারণ অল্প অল্প করে দুটো শিলাস্তরের এই সরণের ফলে আচমকা অনেক বড় সরণ হচ্ছে না। যা ঘটলে বড়সড় ভূমিকম্প ও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি থাকতে পারত।
ভবিষ্যতে যে উপকার
এই গবেষণার ভিত্তিতে আগামী দিনে ভূমিকম্প রোধ করার প্রযুক্তি আরও উন্নত করা যেতে পারে বলে মনে করেন পিয়াল। তাঁর কথায়, মাটির খুব গভীরে ভূমিকম্পের উদ্ভব নয়। তাই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভূমিকম্প আটকে দেওয়া সম্ভব। কয়না অঞ্চলে এই মুহূর্তে তাঁর প্রয়োজন না হলেও পৃথিবীর অন্যান্য কম্পণপ্রবণ এলাকায় অংশে এই প্রযুক্তির দরকার রয়েছে।