Swapnamoy Chakraborty Controversy: এক বছর পূর্ণ হতে কিছু দিন অবশিষ্ট। ২০ ডিসেম্বর ২০২৩। ‘জলের উপর পানি’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত হলেন সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী। তাঁর বিশিষ্ট আঙ্গিক, দীর্ঘ সাহিত্য়িকজীবন স্বীকৃতি পেল জাতীয় স্তরে। কিন্তু বছর ঘোরার আগে সেই সাহিত্যিক বিদ্ধ কুম্ভীলকবৃত্তির দায়ে!
আরও পড়ুন - Swapnamoy Chakraborty: বাংলা সাহিত্যে ‘স্বপ্নময়’ দিন, সাহিত্য অ্যাকাডেমি সম্মান পেলেন বর্ষীয়ান সাহিত্যিক
বিতর্কের সূত্রপাত যেখানে
সম্প্রতি গৌতম মিত্র নামে জনৈক ‘পাঠক’ তাঁর বিরুদ্ধে কুম্ভীলকবৃত্তির অভিযোগ তোলেন জনপ্রিয় সমাজমাধ্যম ফেসবুকে। পাঠক ছাড়াও গৌতম মিত্রের আরেক পরিচয় তিনি কবি জীবনানন্দ দাশের একনিষ্ঠ গবেষক। ফলে একাধারে বিভিন্ন গবেষণাধর্মী গ্রন্থের লেখকও। গত ১১ নভেম্বর নিজের ওয়ালে একটি পোস্ট করেন গৌতমবাবু। পোস্টে বনফুলের (গত শতকের বিখ্য়াত সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়) একটি অণুগল্পের সঙ্গে স্বপ্নময়ের এক অণুগল্পের মিল রয়েছে বলে দাবি করেন। অণুগল্প দুটি বইয়ের পাতা থেকে ছবি তুলে পোস্টও করেন।
স্বপ্নময় চক্রবর্তীর পাল্টা পোস্ট
প্রাথমিকভাবে এটি ঘিরে লেখক-পাঠকমহলে বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অমর মিত্রসহ অন্যান্য সাহিত্যিকরাও জড়িয়ে পড়েন বিবাদে। আত্মপক্ষ সমর্থনে পাল্টা পোস্ট করেন স্বপ্নময় চক্রবর্তীও। পোস্টে উল্লেখ করেন কাহিনিটি একটি প্রাচীন লোককথা থেকে উদ্ধৃত। মিল অনিচ্ছাকৃত। কিন্তু নকল করেননি তিনি। ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে স্বপ্নময় বইটির পরের সংস্করণ থেকে ওই গল্প বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু প্রথম সংস্করণের গল্পটিই চোখে পড়েছিল গৌতমবাবুর। যেখান থেকে বিতর্কের সূত্রপাত।
এর আগেও উঠেছে অভিযোগ
ঘটনাচক্রে এর আগেও কুম্ভীলকবৃত্তির অভিযোগ উঠেছিল স্বপ্নময় চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। বহু আগের ঘটনা। গত ৯ ডিসেম্বরে সেই ঘটনা নিয়ে ফের একটি পোস্ট করেন গৌতমবাবু। এক্ষেত্রে লেখার মিল পাওয়া গিয়েছিল লেখিকা অনিন্দিতা বসুর একটি কাহিনির সঙ্গে। প্রবাসী লেখিকার এক কাহিনির সঙ্গে স্বপ্নময় চক্রবর্তীর পরবাসী উপন্যাসের বেশ কিছু লাইনের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্ট নিয়েও যথেষ্ট উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সেই সময় লেখিকাকেও অনেকে আক্রমণ করেন। বর্ষীয়ান সাহিত্যিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার জন্য। গৌতমবাবুর পোস্টটিতে এই কথার উল্লেখ পাওয়া যায় । তবে এই প্রতিবেদন লেখার সময় দেখা যাচ্ছে, গৌতম মিত্রের পোস্ট ফেসবুক থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। HT বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল গৌতম মিত্র ও স্বপ্নময় চক্রবর্তীর সঙ্গে। কী জানালেন তাঁরা?
‘প্রিয় লেখকের এহেন কাজ কষ্টদায়ক’
গৌতম মিত্রের কথায়, ‘স্বপ্নময় চক্রবর্তী আপনার অন্যতম প্রিয় লেখক। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর লেখার একনিষ্ঠ পাঠক আমি। তাই পছন্দের লেখক এমন দোষে দুষ্ট হলে মন খারাপ হয়। সেই খারাপ লাগা থেকেই পোস্টটি করেছিলাম। কোনও ব্যক্তিগত ঈর্ষা বা আক্রোশ পোস্টের মূলে ছিল না। অনেকেই ঈর্ষা রয়েছে ভেবে নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করন সেদিন। আসলে এটা লেখক-পাঠক সম্পর্কের আবেগ থেকে বলা। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখাও আমার ভীষণ পছন্দ। তাঁর লেখায় এমন কিছু দেখলে একইরকম খারাপ লাগত।’
‘১৯১৯ সালের ঘটনা নিয়ে লেখা’
গৌতম মিত্রের পোস্টের কথা উল্লেখ করে HT বাংলা যোগাযোগ করে স্বপ্নময় চক্রবর্তীর সঙ্গে। বর্ষীয়ান সাহিত্যিক বলেন, ‘বনফুলের বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে জানিয়েছি ইতিমধ্যেই। অনিন্দিতা বসুর লেখা নিয়ে বহুদিন আগে একবার বিতর্ক হয়। পরে সেই বিতর্ক মিটেও গিয়েছিল। ১৯১৯ সালে একটি ঘটনা ঘটেছিল। উপন্যাসের মধ্যে ওই কাহিনিটাই এসেছিল। পরে দেখা যায়, অনিন্দিতা বসু আগেই ওই কাহিনি লিখেছেন তাঁর এক লেখায়।’ প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে অনিন্দিতা বসুর লেখায় উল্লিখিত হয়েছিল ওই ঘটনা। অন্যদিকে ২০১০ সালে লেখা হয় ‘পরবাসী’। গৌতমবাবুর দাবি, ‘বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা হলে কাহিনি এক হতেই পারে। কিন্তু লেখার মধ্যে বেশ কিছু লাইন এক ছিল। এর ব্যাখ্য়া আমার কাছে স্পষ্ট নয়।’ তবে এর সঙ্গেই আরেকবার কথাটি বললেন গৌতমবাবু। মনে করিয়ে দিলেন, ‘প্রিয় লেখকের ক্ষেত্রে এমনটা দেখলে পাঠকের খারাপ লাগা স্বাভাবিক। তাই ওই বিষয়টি উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট করি। আবারও বলি, কোনও ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে এমন পোস্ট করিনি।’