HT Bangla Special: ফের শিরোনামে কুণাল কামরা। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেকে নিয়ে নাকি প্যারোডি সং করেছেন কুণাল। সেই ‘অপরাধে’ তাঁর নামে একাধিক এফআইআর দায়ের হয়েছে। যে স্টুডিয়োতে গানটি করেছিলেন, সেই স্টুডিয়ো ভাঙচুর করে শিব সেনার অনুগামীরা। পরে বৃহন্মুম্বই পুরসভাও যোগ দেয় এই কাজে! তবে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে নারাজ কুণাল। তাঁর কথায়, ক্ষমা চাইবার কোনও প্রশ্নই নেই। সংবাদমাধ্যমে তাঁর সমর্থনে ইতিমধ্যেই বক্তব্য রেখেছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ও তাঁর পুত্র আদিত্য ঠাকরে। বলেছেন, ‘গদ্দারকে গদ্দার বলে কোনও অন্যায় করেননি কুণাল’। আপাতত কুণালের বক্তব্য ঘিরে মহারাষ্ট্রের রাজ্য রাজনীতি উত্তাল।
সুপ্রিম কোর্ট নিয়ে মন্তব্য
এর আগেও শিরোনামে বারবার উঠে এসেছেন কুণাল কামরা। ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্ট নিয়ে সমালোচনামূলক একটি টুইটের জেরে আদালতে মামলা ঠোকা হয় তাঁর নামে। এই ঘটনার অবশ্য ছয় মাস পরে ক্ষমা চান কুণাল। তবে একই সঙ্গে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে কুণালের মতোই বহু কমেডিয়ান সমালোচিত হচ্ছেন তাঁদের মন্তব্যের জেরে। বিশেষত রাজনৈতিক কোনও নেতা-ব্যক্তির কার্যকলাপ নিয়ে ব্যঙ্গ বা শ্লেষাত্মক মন্তব্য করলেই পড়তে হচ্ছে সরকার-প্রশাসনের কোপে। বহু কৌতুকাভিনেতা ও কমেডিয়ানদের একের পর এক শো বাতিল হয়েছে বা ভাঙচুর করে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আগের তুলনায় পরিস্থিতি যে অনেকটাই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে, কমে আসছে বাকস্বাধীনতার পরিসর, সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন অভিনেতা অরিত্র দত্তবণিক।
আরও পড়ুুন - ‘অনুতাপ নেই, আদালত না বললে ক্ষমা চাইব না’, বললেন কুণাল, জয়া জানালেন সমর্থন
ব্রিটিশদের নীতি
কুণাল কামরা বিতর্কে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে তিনি জানালেন, ‘ব্যান কালচার বা ক্যানসেল কালচার ভারতবর্ষে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ব্রিটিশ সরকারের আমল থেকেই দেশদ্রোহ আইনের মতো কিছু অদ্ভুত আইন তৈরি করে তার অপব্যবহার করা হয়ে আসছে। মহাত্মা গান্ধীর হিন্দ স্বরাজ বইটিও ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করেছিল। রাজনৈতিক পরিবেশ আগের তুলনায় পাল্টে যাচ্ছে, তার বড় প্রমাণ, আগেকার দিনে বেশিরভাগ রাজনীতিক তাদের ব্যঙ্গচিত্র, কার্টুন নিয়ে এমন অসহিষ্ণু আচরণ করতেন না।’
নেহরু লিখে দেন বইয়ের ভূমিকা
কথা প্রসঙ্গে অরিত্র মনে করিয়ে দিলেন হিন্দুস্তান টাইমসেরই বিখ্যাত সাংবাদিক তথা কার্টুনিস্ট কেশব শঙ্কর পিল্লাইয়ের কথা। ‘কার্টুনিস্ট শঙ্কর তাঁর সময়ে বহু ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে নিয়ে। তাঁর জেরে কখনও তাকে সরকারি কোপে পড়তে হয়নি। ঘটনাচক্রে, জওহরলাল নেহরুই পরে শঙ্করের বই প্রকাশের সময় তার ভূমিকাও লিখে দেন।’

আরও পড়ুুন - ‘রবীন্দ্রনাথের আদর্শ ভালো বুঝি, আশা করি কোনও সমস্যা হবে না!’ HT বাংলায় Exclusive বিশ্বভারতীর নতুন উপাচার্য
‘কারা দিচ্ছেন নীতির পাঠ?’
সহিষ্ণুতার এমন উদাহরণ এখনকার রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা কেন দেখাতে পারছেন তারও কারণ দর্শাচ্ছেন অভিনেতা। অরিত্রের মতে, ‘এখনকার আইনসভার দিকে তাকালে দেখবেন অধিকাংশই বিভিন্ন ক্রিমিনাল কেসে অভিযুক্ত। কারও নামে খুন, রাহাজানি, তো কারও নামে ধর্ষণের অভিযোগ। আজ কুণাল কামরার মন্তব্য নিয়ে এত হইচই, কিন্তু কারা সেই নীতিকথার পাঠ দিচ্ছেন? যাদের নিজেদেরই নীতির ঠিক নেই তারা?’
‘মানুষ প্রতিবাদ জানাবে কোথায়?’
ব্যক্তিগত স্বার্থে যারা দল বদলান, তারা মানুষের ভোটে জিতে এসে এক অর্থে মানুষকেই বঞ্চিত করেন। অরিত্রের কথায়, ‘এই মানুষরা তাঁদের প্রতিবাদ জানাবে কোথায়? স্বাভাবিকভাবে সমাজ মাধ্যম ও অন্যান্য গণ পরিসরকেই তাঁরা বেছে নেবেন। একজন কমেডিয়ান বেছে নেবেন তাঁর শিল্পকে। একজন গায়ক তাঁর গানের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন প্রতিবাদ। একজন পরিচালক প্রতিবাদ জানাবেন সিনেমার মধ্যে দিয়ে। সেখানে প্রত্যেককেই তাদের নিজেদের শিল্পক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
‘বর্বরতা সমর্থনযোগ্য নয়’
কুণাল কামরার কাজে কি সমর্থন জানাচ্ছেন অরিত্র? অভিনেতার স্পষ্ট উত্তর, ‘একজনের মন্তব্য অন্য একজন ব্যক্তির খারাপ লাগতেই পারে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সুষ্ঠুভাবে প্রতিবাদ জানানো যায়, আইনি পথে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু এসব কিছু না করে স্টুডিয়োতে ভাঙচুর করার মতো বর্বরতার কোনও মতেই সমর্থন যোগ্য নয়। এগুলো অশিক্ষার প্রমাণ। যে অশিক্ষা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে এখনকার দিনে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।’