HT Bangla Special: মাথার ভিতর কেমন যেন সব গুলিয়ে যাচ্ছে। মন দিয়ে কোনও কিছু করতে গেলে বেশিক্ষণ মনোযোগ করতে পারা যায় না। কিছু ঠিকভাবে ভাবতে গেলেও স্পষ্ট করে ভাবতে পারা যায় না। কবিত্ব করে বললে বলা যেতেই পারে, মাথার ভিতর যেন কুয়াশা জমেছে। কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় না। কিছুই স্পষ্ট বোঝা যায় না। চিকিৎসাবিজ্ঞান বোধহয় সেই কবিত্বকেই ধার করে মস্তিষ্কের এই সমস্যার নাম রেখেছে ‘ব্রেন ফগ’ (Brain Fog)। সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে এই বিশেষ সমস্যাটি নিয়ে বিস্তারিত কথা বললেন ফর্টিস হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অমিত হালদার।
ব্রেন ফগ কী?
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিত হালদার জানাচ্ছেন, ‘ব্রেন ফগ একধরনের নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুর সমস্যা। এর ফলে একজনের অ্যাটেনশন স্প্যান (অর্থাৎ বেশিক্ষণ কোনও বিষয়ে মনোসংযোগ করার ক্ষমতা) কমে যায়। কমে যায় পরিকল্পনামাফিক কোনও কাজ করার ক্ষমতা। এই সমস্যা যাদের আছে, তাঁরা খুব সহজে ক্লান্তও বোধ করেন।’
আরও পড়ুন - ভারত AI-র দারুণ বাজার! HT-র সাক্ষাৎকারে আর কী বললেন ওপেনএআই-এর সিইও স্য়াম
ব্রেন ফগ কেন হয়?
ব্রেন ফগের কারণে মস্তিষ্কের কোন অংশ দায়ী। কেন এই সমস্যাটি দেখা দেয়? চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী, ‘ব্রেন ফগ অনেকগুলি কারণেই হতে পারে। সাম্প্রতিককালে দেখা গিয়েছে, কোভিডের পর ১৫-২০ শতাংশ করোনা আক্রান্ত রোগীরা ব্রেন ফগে ভুগছেন। হয়তো তাঁরা শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন কিন্তু মনোসংযোগ করার সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। লং হল কোভিড (long haul covid) নামে একটি বিশেষ ধরনের কোভিড রয়েছে। যার ফলে ব্রেন ফগ হতে পারে।’
দায়ী হতে পারে ওষুধও
ওষুধও ব্রেন ফগের একটি বড় কারণ হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক অমিত হালদার। তাঁর কথায়, ‘কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে যেগুলো সাইকোট্রপিক বা অ্যান্টিকনভালসান মেডিকেশন। এগুলি ব্রেনের উপরেই কাজ করে। যার একটি ফলাফল হতে পারে ব্রেন ফগ।’
আরও পড়ুন - প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় এইসব খাবার, বিপদ এড়ানোর উপায় জানালেন চিকিৎসক
অবসাদ ও উদ্বেগও কুয়াশাচ্ছন্ন করে
মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটিও ব্রেন ফগের কারণ হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। ডাক্তারবাবুর কথায়, ‘ অতিরিক্ত অবসাদ বা উদ্বেগ থাকলে প্রায়ই মনোসংযোগ করতে অসুবিধা হয়। ঠিকমতো কোনওকিছু মনে পড়ে না। কথা বলতে গেলে একটু ভাবতে হয়। সঠিক শব্দ খুঁজে পেতে মনের মধ্যে হাতড়াতে হয় কিছুক্ষণ। এছাড়াও, অনেকের ঘুমের সমস্যা হয় ভীষণ। এই লক্ষণগুলি আদতে ব্রেন ফগের লক্ষণ।’
নেশাও ব্রেন ফগের কারণ
‘খুব বিরল কিছু নিউরোলজিক্যল ডিসঅর্ডার বা ব্রেনের ভিতর কিছু হলে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ব্রেন ফগ দেখা দেয়। তবে সেটি নির্দিষ্ট নয়। অর্থাৎ হবেই এমনটা নয়।’ চিকিৎসক অমিতবাবুর কথায়, ‘এসব কারণ বাদে শরীরে কোনও পুষ্টিগুণের অভাবে বা নেশার জন্য়ও ব্রেন ফগ দেখা দিতে পারে। যে কোনও রকমের নেশার কারণেই হতে পারে ।’
ব্রেন ফগ হলে কী করণীয়
‘কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই।’ প্রথমেই সুস্থ হওয়ার ভুয়ো শর্টকাটকে বাতিল করে চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ‘মূল যে সমস্যার জন্য ব্রেন ফগ হচ্ছে, সেই সমস্যাকে খুঁজে বার করতে হবে। সমস্যাটির চিকিৎসা হলে ব্রেন ফগ নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। যেমন কোনও ওষুধ থেকে সমস্যাটি হলে ওষুধটি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বন্ধ করতে হবে। কোনও নেশা বা স্নায়ুর রোগের কারণে হলে তার চিকিৎসা করতে হবে। আর যদি অবসাদ বা উদ্বেগ থেকে হয়, প্রয়োজনে সাইকোলজিস্টের পরার্মশ নিতে হবে।’ ডাক্তারবাবুর কথায়, ‘প্রথমে দুদিন বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে দেখতে হবে, সমস্যার সমাধান হচ্ছে কি না। তা না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।’
প্রতিবেদনটি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মতামতের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। ব্যক্তিবিশেষ অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই বদলে যায় চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই যে কোনও সমস্যায় শুধুমাত্র এই প্রতিবেদনের কথায় ভরসা না রেখে, ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসকের বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।