HT Bangla Special: ওজন কমাতে হবে বা নির্দিষ্ট ফিগার চাই। আর এর জন্য প্রথমেই যেটা মাথায় আসে, তা হল ডায়েট। অনেকেই ডায়েট চার্ট নিজের ইচ্ছেমতো বানিয়ে নেন। অথবা সাহায্য নেন ইন্টারনেটের। ডায়েটের জন্য় পয়সা খরচ করে চিকিৎসক বা ডায়েটিশিয়ানের কাছে যেতে তারা রাজি হন না। কিন্তু ডায়েটিশিয়ানের কাছে কেন যাওয়া জরুরি, তার উত্তর লুকিয়ে রক্ত পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে। যেকোনও ব্যক্তির ডায়েট চার্ট তৈরির আগে কেন রক্ত পরীক্ষা বা ব্লাড টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ? হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাতে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন অ্যাপোলো ক্লিনিকসের কনসাল্টিং ডায়েটিশিয়ান জয়িতা ব্রহ্ম।
ডায়েটের জন্য ডায়েটিশিয়ানদের কতটা দরকার?
ডায়েটিশিয়ান জয়িতার কথায়, ‘ডায়েটিশিয়ানের ভূমিকা সম্পর্কে সম্যক ধারণা অধিকাংশ মানুষেরই নেই। আমরা সবাই নিজেদের ওজন এবং ফিগার নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট বা চিন্তায় থাকি। এবং ঠিক তখনই ডায়েটিশিয়ান এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি, নচেৎ নয়। কিন্তু ওজন যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, শরীরে যাতে রোগ বাসা না বাঁধে, তার জন্য ডাক্তারের পরামর্শের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ একজন ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ।’
আরও পড়ুন - বাংলার ঐতিহ্যের সমাহার! বীরভূমের জয়দেবের মেলা ও সাধুমেলায় সম্প্রীতির দৃশ্য
ওষুধ ও খাবারের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
জয়িতা জানাচ্ছেন, ‘শরীরে বাসা বেঁধেছে রোগ (মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত ওজন বা ওভারওয়েটও একরকম রোগ বা রোগের কারণ)। রোগ সুগার, প্রেশার, থাইরয়েড, লিভারের সমস্যা বা অন্য যেকোনও কিছু হতে পারে। কিন্তু এই সময় শুধু চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খেলেই হয় না। তার সঙ্গে বাদ দিতে হয় বা ডায়েটে রাখতে হয় কিছু নির্দিষ্ট খাবার। নয়তো ওষুধ ও খাবারের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা Drug Food Interaction হয়। এখানেই একজন ডায়েটিশিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নির্দিষ্টভাবে কী কী খাওয়া উচিত নয় ও কী কী খাওয়া উচিত, সে বিষয়ে পরামর্শ দেন।’
আরও পড়ুন - ফ্য়াট না থাকলেও শরীরের এই পেশি ঘটাতে পারে হার্ট অ্যাটাক! খোঁজ নয়া গবেষণায়
ডায়েটের আগে রক্ত পরীক্ষা কেন জরুরি?
অনেক সময় শরীরে রোগ ঘাপটি মেরে থাকে। কিন্তু সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই ওয়াকিবহাল থাকেন না। ওজন বেশি বলে সরাসরি ডায়েট ফলো করতে শুরু করে দেন। ডায়েটিশিয়ান জয়িতার মতে, ‘এই ধরনের জেনারেল ডায়েটে বিশেষ লাভ হয় না। কারও হয়তো লিভারের সমস্যা রয়েছে, তিনি সেটা না-জেনেই নিজের মতো ডায়েট শুরু করে দিলে ওজন নাও কমতে পারে। এমনকি দেখা যায়, এই ধরনের ডায়েট অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ফলো করতে পারেন না। হাল ছেড়ে দেন। এর কারণ, তার জেনারেল ডায়েটের বদলে স্পেসিফিক ডায়েট দরকার। পাশাপাশি প্রেশার, সুগার, লিপিড প্রোফাইলে সমস্যা থাকলেও একই কথা প্রযোজ্য। এই কারণেই ডায়েটিশিয়ান রক্ত পরীক্ষা করাতে বললে তাকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।’
ডায়েটের আগে রক্ত পরীক্ষা করানোর আরও কিছু কারণ
১) কোনও নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি বা আধিক্যজনিত সমস্যা যেমন অ্যানিমিয়া, ভিটামিন ডি বা বি১২-এর ঘাটতি হয়েছে কি না ইত্যাদি জানার জন্য
২ ) কোনও দীর্ঘস্থায়ী অসুখ যেমন ডায়াবিটিস বা হাইপোথাইরয়ডিজমের মতো সমস্যার পর্যবেক্ষণের জন্য কিছু ব্লাড টেস্ট খুবই প্রয়োজনীয়। এগুলি দেখে ডায়েটের অ্যাডজাস্টমেন্ট করা হয়।
৩) কিছু নির্দিষ্ট ব্লাড টেস্ট থেকে আমাদের শরীরের প্রোটিনের ঘাটতি শনাক্ত করা যায়। যেটা কিছু নির্দিষ্ট মেডিক্যাল কন্ডিশনের ক্ষেত্রে বা যারা সদ্য কোনও সার্জারি থেকে রিকভার করছেন, তাদের ক্ষেত্রে জানা ভীষণ ভাবে জরুরি।
৪) Celiac Disease বা Chron's Disease-এর মতো সমস্যায় কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদানের শোষণজনিত ত্রুটি শনাক্ত করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা অবশ্যই জরুরি হয়ে পড়ে।
৫) রোগীর বর্তমান পুষ্টিগত মান বা অবস্থা কীরকম, তার ওপর ভিত্তি করে একজন পুষ্টিবিদ একটি স্বতন্ত্র ডায়েট চার্ট তৈরি করেন। এই কারণেই রক্ত পরীক্ষা করাটা জরুরি যা অবহেলা করা একেবারেই উচিত নয়।