অতি অল্প বয়স থেকেই আজকাল হার্টের সমস্যা। আবার শীতকাল মানেই হার্টের রোগের বাড়বাড়ন্ত। মানসিক স্বাস্থ্যও কি হার্টের রোগের জন্য দায়ী? কীভাবে অবসাদ বা উদ্বেগ প্রভাব ফেলছে হার্টের উপর? সম্প্রতি হার্টের রোগের পিছনে দায়ী নানা মানসিক রোগ নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে বিশদে আলোচনা করলেন বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিয়োলজির ডাইরেক্টর চিকিৎসক ধীমান কাহালি।
অনিশ্চয়তা থেকে জন্ম নিচ্ছে তীব্র দুশ্চিন্তা
মনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে হার্টের রোগ। তাই হার্ট অ্যাটাক থেকে করোনারি হার্ট ডিজিজের মতো রোগগুলিতে মনের একটা বড় ভূমিকা থাকে বলে জানালেন চিকিৎসক। ধীমান কাহালির কথায়, ‘কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের একটা বড় কারণ জীবন সম্পর্কে উদ্বেগ ও আশঙ্কা। অতি অল্প বয়স থেকেই এখন ইঁদুর দৌড়ে সামিল হতে হয়। প্রতিযোগিতাও দিনদিন বাড়ছে। ফলে কোথাও সুযোগ না পেলে অনেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এত দুশ্চিন্তা আসলে চেন স্মোকিংয়ের সমান। একজন চেন স্মোকারের যতটা হার্টের রোগের আশঙ্কা রয়েছে, ততটাই রয়েছে এমন দুশ্চিন্তাপ্রবণ যুবক যুবতীর।’
অবসাদও একইরকম বিপজ্জনক
কথায় কথায় ধীমানবাবু বললেন আরেকটি মানসিক অবস্থা অবসাদের প্রভাব। ‘অনেকেই আছেন খুব ইন্ট্রোভার্ট। অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন না। নিজের মতো একা থাকতে ভালোবাসেন। তাদের মধ্যে অনেকেই অবসাদজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকেন। যা একটা সময়ের পর হার্টের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেখা গিয়েছে, একটা মানুষ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন। অথচ হয়তো তার তত বয়স নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসবের বড় কারণ হল মানসিক অবসাদ।’
নেশাও সমানভাবে ক্ষতিকর
‘অন্যদিকে হার্টের ক্ষতির আরেকটি বড় কারণ নেশা। এখন মদ্যপান, ধূমপানের পাশাপাশি আরও নানা ধরনের নেশাও বাজারে উপলব্ধ। এগুলির প্রতি কমবয়সীদের আকর্ষণও বাড়ছে। বস্তু অর্থাৎ মদ, সিগারেটের নেশার পাশাপাশি বিহেভেিয়াল অ্যাডিকশন বা স্বভাবগত নেশাও (অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনও একটি কাজ বারবার করা, সেটি না করলে অস্বস্তিবোধ করা) বাড়ছে। যেকোনও নেশাই একধরনের মানসিক নির্ভরতার জন্ম দেয়। একটা সময়ের পর সেটা না পেলে মানুষ বিরক্ত হয়, মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যায়, এমনকি তাঁর মধ্যে নেতিবাচক নানা অনুভূতি কাজ করতে থাকে। নেশা থেকে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে থাকে। যা আবার হার্টের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’
ভালো থাকার চাবিকাঠি
স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, নিয়ম মেনে জীবনযাপন অবশ্যই হার্ট সুস্থ রাখতে জরুরি। কিন্তু এর পাশাপাশি ধীমানবাবুর মতে, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা মারা, পরিচিত মানুষদের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটানো দরকার। এই প্রসঙ্গে একটি গবেষণার কথাও মনে করিয়ে দিলেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। চিকিৎসকের কথায়, ‘একাধিক গবেষণায় এটি প্রমাণিত সত্য, যারা আড্ডা দেয়, বেশি মেলামেশা করে অর্থাৎ সেই অর্থে সোশ্যাল, তাদের হার্টের রোগের আশঙ্কা অনেকটাই কম ।’