HT Bangla Special: শীতের সময় শেষ, ধীরে ধীরে পারদ চড়তে শুরু করেছে। আর এর সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় গরমকালের কিছু পরিচিত সমস্যা। গ্রীষ্মের চড়া রোদ এখনও ততটা নেই। কিন্তু ইতিমধ্যেই ঘাম হতে শুরু করেছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যারা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি ঘামেন। যার ফলে বাইরে বেরোলেই নানাধরনের অস্বস্তির শিকার হতে হয়। অতিরিক্ত ঘামের জন্য গায়ে দুর্গন্ধও হয়। এমন সমস্যার মোকাবিলা করতে জীবনযাপনে কী কী বদল আনা জরুরি (Hyperhidrosis Remedies)? অতিরিক্ত ঘাম কি গুরুতর কোনও রোগ (Hyperhidrosis Cause)? হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা বা হাইপারহাইড্রোসিস প্রসঙ্গে আলোচনা করলেন আইএলএস হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান চিকিৎসক সর্বজিৎ রায় (জেনারেল মেডিসিন)।
হাইপারহাইড্রোসিসের কারণ সুগার ফল?
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ‘হাইপারহাইড্রোসিস দুইরকম হতে পারে। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রাইমারি হাইপারহাইড্রোসিস কোনও কারণ ছাড়াই হতে পারে। অন্যদিকে সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস কোনও ওষুধ খাওয়ার কারণে বা রোগজনিত কারণে ঘটে থাকে। যেমন থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে, সুগার ফল করলে অনেকেই প্রচণ্ড ঘামেন।’ তবে প্রাইমারি হোক বা সেকেন্ডারি, হাইপারহাইড্রোসিসের একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও রয়েছে। সর্বজিৎ রায়ের কথায়, ‘এই ধরনের সমস্যার জেরে অনেক পাবলিক প্লেসে অপ্রস্তুতে পড়েন। অনেকসময় ঘামের সঙ্গে গায়ে দুর্গন্ধও হয়। যার জেরে পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়। তবে জীবনযাপনে কিছু বদল এক্ষেত্রে জরুরি। সেটি করা গেলেই ঘামের সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’
আরও পড়ুন - মৃগীর চিকিৎসা এখন বেশ উন্নত, দরকার সচেতনতা, খিঁচুনি রোগ নিয়ে আলোচনায় নিউরোলজিস্ট
কোন কোন বিষয়ে নজর রাখা জরুরি?
মেডিসিনের চিকিৎসকের কথায়, ‘হঠাৎ সুগার ফল করলে প্রচণ্ড ঘাম হতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে ঘাম হতে পারে। আবার, অনেকে কিছু নির্দিষ্ট রোগের মেডিসিন খান বলেও ঘামেন। যেমন জ্বরের জন্য বহুলব্যবহৃত ওষুধ প্যারাসিটামল খেলে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। তাই অতিরিক্ত ঘাম হলে নজর রাখতে হবে সুগার ফল করল কি না, থাইরয়েডের সমস্যা হচ্ছে কি না।’
ঘেমে যায় হাত, পায়ের তালুও
কোনও ওষুধ না খেলেও বা রোগ না থাকলেও অনেকে বেশি ঘামেন। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, হাত, বগল, কুঁচকি ভীষণ ঘেমে যাচ্ছে। এতটাই ঘামছে যে জামাকাপড় ভিজে যাচ্ছে, পরীক্ষা দিতে বসে পরীক্ষার্থী লিখতে পারছেন না। এমন সব পরিস্থিতিতে প্রথমে দেখতে হবে কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে কি না। তেমন কোনও রোগ না থাকলে চিকিৎসকের কথায়, ‘কিছু লাইফস্টাইল চেঞ্জ আনতে হবে। তাহলে ঘাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।’
আরও পড়ুন - থাইরয়েডের মাংসপিণ্ড থেকে ক্যানসারের ভয়? HT বাংলায় আলোচনা করলেন চিকিৎসক
কী কী লাইফস্টাইল চেঞ্জ জরুরি?
চিকিৎসক সর্বজিৎ রায় এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘প্রথমেই শরীরের জল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক রাখা জরুরি। অতিরিক্ত ঘামের জন্য শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে যায়। তাই জল খাওয়ার হারও বাড়াতে হবে। অন্যদিকে, স্নানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বেশিবার স্নান করলে পরিষ্কার থাকা তুলনায় সহজ হয়। ঘাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ট্যালকম পাউডারও ব্যবহার করতে পারেন প্রয়োজনে।’
ঘাম বন্ধ করার কোনও চিকিৎসা?
চিকিৎসকের মতে, ‘অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া কমানোর করার জন্য এখন আধুনিক চিকিৎসা সহজেই উপলব্ধ রয়েছে। ওই চিকিৎসাগুলির সাহায্যে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘাম হওয়া বন্ধ করে দেওয়াও সম্ভব। কিন্তু এই ধরনের ট্রিটমেন্ট সবার জন্য নয়। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে এগুলির প্রয়োগ করা হয়। তাই কোনও রোগ না থাকলে অর্থাৎ প্রাইমারি হাইপারহাইড্রোসিসের সমস্যা হলে জীবনযাপনে বদল এনেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া শ্রেয়।’
প্রতিবেদনটি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মতামতের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। ব্যক্তিবিশেষ অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই বদলে যায় চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই যে কোনও সমস্যায় শুধুমাত্র এই প্রতিবেদনের কথায় ভরসা না রেখে, ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসকের বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।