কোভিড পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু কোভিডের সুদূরপ্রসারী প্রভাব শরীরের উপর কেমন ভাবে পড়ে, তা নিয়ে এখনও নানা সংশয় রয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। যত দিন যাচ্ছে, এই নিয়ে নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে। তার ফল আসছে হাতে। শুধু তাই নয়, বহু মানুষের থেকেও জানা যাচ্ছে, তাঁদের অসুবিধার কথা। আর সেখান থেকেই উঠে আসছে নানা নতুন সমস্যার বিষয়। তার মধ্যে খুব অদ্ভুত একটি সমস্যার কথা জানা গিয়েছে হালে। দেখা গিয়েছে কোভিড সংক্রমণের ফলে এক জন হারিয়ে ফেলেছেন অন্যকে চেনার ক্ষমতা।
হালে ২৮ বছরের এক মহিলার থেকে অদ্ভুত কথা জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০২০ সালে তিনি কোভিডে আক্রান্ত হন। এখনও লং কোভিডের প্রভাব থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত নন। হালে আনা নামের (নাম পরিবর্তিত) এই মহিলা বিজ্ঞানীদের জানিয়েছেন, তিনি দোকান থেকে কিছু একটা কিনতে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে পাশ থেকে একজন তাঁকে কিছু একটা বলেন। যিনি কথা বলেন, তাঁকে আনা চিনতে পারেন না। কিন্তু তাঁর গলার স্বরটি খুবই পরিচিত। কিছু ক্ষণ কথা শুনে আনা টের পান, এটি তাঁর বাবার গলার স্বর। অথচ, সামনে যে মানুষটি দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তিনি যে তাঁর বাবা-ই, সেটি মুখ দেখে বুঝতে পারছেন না আনা।
তবে এই ধরনের সমস্যা যে নতুন, তা মোটেই নয়। স্নায়ুর এবং মস্তিষ্কের জটিল অসুখ থেকে এই জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে অন্যের মুখ দেখে তাঁকে চেনার ক্ষমতা কমে যায় মানুষের। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘ফেস ব্লাইন্ডনেস’ বা ‘প্রোসোপ্যাগনোসিয়া’ বলে। কিন্তু এক্ষেত্রে নতুন যে বিষয়টি বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছে, তা হল কোভিডের কারণে এই সমস্যা দেখা দেওয়া।
আনার এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই চিন্তিত হন বিজ্ঞানীরা। আমেরিকার ডার্টমাউথ কলেজের গবেষকরা এর পরে বেশ কয়েক জন কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীকে নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন। তাঁরা আবিষ্কার করেছেন, বহু রোগীর মধ্যেই এই সমস্যা বাড়ছে।
কোভিডের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের এই দিকটি এত দিন বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল। তাঁরা বলছেন, কোভিডের প্রভাব মারাত্মক ভাবে পড়তে পারে স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের উপর। তার কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে। তবে কত দিন এই সমস্যা থাকছে, কীভবে সারছে, সে সম্পর্কে এখনও ধোঁয়াশায় তাঁরা।