করোনা পরবর্তী সময়ে খবরের কাগজের ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। বহু মানুষই ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের প্রতি ভরসা বাড়িয়েছেন। তার ফলে খবরের কাগজের বিক্রি কমেছে। আর এই কারণেই কলকাতার ইতিহাসের এক অধ্যায়েরও সমাপ্তি ঘটে গেল। বন্ধ হল কলকাতা থেকে ছাপা হওয়া চিনা ভাষার সংবাদপত্র। শুধু কলকাতা নয়, গোটা দেশের মধ্যেই এটি একমাত্র সংবাদপত্র, যা কি না চিনা ভাষায় ছাপা হত।
‘সিয়ং পাও’। কলকাতার নিউ ট্যাংরা স্ট্রিট থেকে ছাপা হত খবরের কাগজটি। এর উপর প্রথম কোপটি ফেলে করোনা। করোনার প্রথম আসার সময়েই বন্ধ হয়ে যায় এই কাগজ। তার পরে আজ বেরোবে, কাল বেরোবের চক্কর চলতে থাকে। কিন্তু সেই দিন আর আসেই না। শেষ পর্যন্ত এটি যে আর কখনও বেরোবে না, তা নির্ধারিত হয়ে যায় ২০২১ সালেই। সেই বছরের শেষ দিকে প্রয়াত হন এই কাগজের সম্পাদক কুয়ো-সাই চাং। দায়িত্ব নিয়ে এই কাগজ প্রকাশ করার আর কেউ থাকেন না। ফলে ঘোষিত হয়ে যায় ইতিহাসের এই অধ্যায়টির পরিসমাপ্তি।
(আরও পড়ুন: ১০০০ বছর পুরনো বাইবেলের পাণ্ডুলিপি! নিলামে উঠতেই বিক্রি হল রেকর্ড দামে)
১৯৬৯ সালে এই কাগজের শুরু। লি ইয়ুন চিন সেই সময়ে এটি শুরু করেছিলেন ট্যাংরা অঞ্চলের মানুষের জন্য। শেষ বেলায় এসে এটি ছিল ৪ পাতার পত্রিকা। প্রতিদিনই এটি প্রকাশিত হত। মূলত চিন, তাইওয়ান, হংকংয়ের খবর এখানে থাকত। তার সঙ্গে অবশ্যই থাকত কলকাতার খবরও। দেশের অন্যান্য প্রান্তের খবরও প্রয়োজন মতো ধরানো হত এখানে। ইংরেজি কাগজ থেকে ম্যান্ডারিন ভাষায় অনুবাদ করা হত খবর। সেগুলিই প্রকাশিত হত এখানে।
সম্প্রতি এই পত্রিকার অফিসের দফতরে হাজির হয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। তাঁরা দেখেছেন, ভগ্ন টেবিল-চেয়ার, পুরনো কিছু কাগজ ছাড়া প্রায় কিছুই আর অবশিষ্ট নেই এই দফতরে। বহু দিনের অব্যবহৃত থাকার ফলে গোটা অফিসই মালিন্যে ভর্তি। এক সময়ে রোজ ২ হাজারের উপর বিক্রি হওয়া এই কাগজের এমন হাল কী করে হল?
(আরও পড়ুন: ওরে বাবা, এত দাম! খাবেন কী, সোনার পাতায় মোড়া আইসক্রিমের দাম শুনেই অজ্ঞান)
এ প্রসঙ্গে বলতে চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট চেন ইয়াও হুয়া জানিয়েছেন, এর জন্য দায়ী ম্যান্ডারিন ভাষাটি নতুন প্রজন্মের না জানা। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রায় কেউই আর চিনা ভাষা জানেন না। ফলে তাঁদের পক্ষে আর অনুবাদের কাজ করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই এই কাগজটি আর প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর তার ফলেই শেষ হয়ে গেল কলকাতার ইতিহাসের এক অধ্যায়।
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup