রণবীর ভট্টাচার্য
শনিবার, ৭ মে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা দিবস। ১৯৭৩ সালে ডগ বার্জার, সেই সময়ের অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব নর্দান ক্যালিফোর্নিয়ার প্রেসিডেন্ট এই দিনের প্রবর্তন করেন। শুরুতে এই দিন উদ্যাপনের লক্ষ্যই ছিল বিভিন্ন জায়গায় টেলিস্কোপ বসিয়ে মহাকাশ দেখার সুযোগের মধ্যে দিয়ে সবার মধ্যে মহাকাশ সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করা। শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক বা বিজ্ঞানমনস্করা নন, তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যেও মহাকাশ নিয়ে সম্যক ধারনা তৈরি করা।
জ্যোতির্বিদ্যা নিঃসন্দেহে খুব প্রাচীন বিদ্যা। বদলে যাওয়া পৃথিবীর থেকেও দ্রুত বদলাতে থাকে মহাকাশের সব কিছু। নতুন গ্রহের আবিষ্কার থেকে উল্কাপাত, মহাকাশের কান্ডকারখানা সত্যি অবাক করে দেওয়ার মতো। সভ্যতার ইতিহাসে মানুষের মহাকাশ নিয়ে আগ্রহ চিরন্তন। গ্যালিলিও বা কোপারনিকাসের কথা তো সকলেই জানেন। আজ যা ধ্রুব সত্য বলে মনে হচ্ছে কাল সেটি ভুল বলেও জানা যেতে পারে। অর্থাৎ মহাকাশ সম্পর্কে এখনও মানুষের অনেকটাই জানা বাকি। অনেকেই জ্যোতির্বিদ্যার সাথে কুসংস্কার জুড়তে চান, কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যা বিজ্ঞান নির্ভর। অনেকেই দেখা গিয়েছে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ শুভ বা অশুভ বলেন। জ্যোতির্বিদ্যার পৃথিবীতে যা দেখা যাচ্ছে, সবটাই বাস্তব, এর মধ্যে সংস্কারের কোন লেশমাত্র নেই। তাই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণের সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে নিরাপদে টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহণ দেখার ব্যবস্থা করা হয়ে থেকে। বলাই বাহুল্য, বর্তমানে অনেক মিউজিয়াম অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে এই বিষয়ে। ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে অনেক সময়ে বিজ্ঞানীরা সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেন এবং ক্যুইজ বা বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়ে থাকে অনেক সময়।
বাস্তব জীবনে কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যার সরাসরি সাহায্য অনেক ক্ষেত্রেই নেওয়া হয়ে থাকে। জাহাজের ক্যাপ্টেনরা নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও এখনও কিন্তু আকাশের তারা দেখে দিক নির্ণয় করেন। অতীতে সামুদ্রিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েও জ্যোতির্বিদ্যা সাহায্য করেছে অনেক পোড়খাওয়া জাহাজের নাবিককেও। মহাকাশের কথা বলতে গেলে চাঁদের কথা তো বলতেই হবে! চাঁদের সঙ্গে মানুষের রূপের তুলনা থেকে আরম্ভ করে জন্মবৃত্তান্ত, ইতিহাসে বারবার ফিরে এসেছে। আবার সূর্যের কথা বাদ দেওয়া যায় কি করে! ঘড়ির প্রচলনের আগে মানুষ সময়ের হিসেব রাখত সান ক্লকের সাহায্যে। একটি কাগজের প্লেট ও পেন্সিল দিয়ে যে কেউ বানিয়ে নিতে পারে বানিয়ে ফেলতে পারে সান ক্লক।
জ্যোতির্বিদ্যা বিজ্ঞান শিক্ষায় বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে, যার অনেকটাই সাধারণ মানুষের আয়ত্বের বাইরে। ওষুধ, শিল্প, প্রতিরক্ষা, পরিবেশের দিকে নজর রাখা, বিভিন্ন পণ্য - প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জ্যোতির্বিদ্যার ব্যবহার হয়েই থাকে। বলাই বাহুল্য, জ্যোতির্বিদ্যার সাথে জ্যোতিষশাস্ত্রের গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। তবে জ্যোতির্বিদ্যার থেকে নতুন নতুন শিক্ষার আঙ্গিক এগিয়ে আসছে। মানুষ আরো বেশি উৎসুক মহাকাশ নিয়ে জানতে।
ভিনগ্রহে কি অন্য জীব রয়েছে? তারা কি পৃথিবীতে আসতে চায়? উড়ন্ত চাকি বা ইউএফও বলে সত্যি কিছু রয়েছে?
মহাকাশ নিয়ে এখনও অনেক উত্তর না জানা প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। সামনের দিনে জ্যোতির্বিদ্যা পথ দেখাবে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে যা মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ, ভবিষ্যৎ বলবে। তবে বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা আবশ্যিক হওয়া দরকার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে।