১ অক্টোবর সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস বা বয়স্ক ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে পালিত হয়। ইউনাইটেড নেশনস ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯০ তারিখে বয়স্কদের জন্য আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস হিসাবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করেছিল, যার পরে এই দিনটি ১ অক্টোবর ১৯৯১ থেকে প্রবীণদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে পালিত হয়।
এই দিনে, আমাদের সকলের কেবল প্রবীণদের প্রতি উদার হওয়ার শপথ নেওয়া উচিত নয়, প্রবীণদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্বও বোঝা উচিত। এই দিবসটি উদযাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য হল বয়স্কদের প্রতি বৈষম্য ও অশোভন আচরণ দূর করা। বর্তমান জীবনধারা এবং ছোট পারিবারিক সংস্কৃতিতে বয়স্কদের সুস্থ ও সুখী রাখা আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে।
UNFPA অর্থাৎ জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সাল নাগাদ ভারতে প্রবীণদের জনসংখ্যা ১৫ কোটিতে পৌঁছোবে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের যত্নের প্রয়োজন হবে আগের চেয়ে বেশি। এই সময়ে তাঁদের যত্ন নেওয়ার জন্য কয়েকটি কথা মাথায় রাখা দরকার।
শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখা: শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার ফলে শরীরে বয়সের প্রভাব কমে যায়। বয়স্কদের জন্য কিছু ব্যায়াম করা জরুরি। কারণ এটি হৃদস্পন্দন বাড়ায় এবং সঠিক রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে। শারীরিক ক্রিয়াকলাপের ফলে ঘাম হয়, যা শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে দেয়। এতে যা হয় তা হলো শরীর ভালো ভারসাম্য বজায় রাখে এবং মন ভালো চিন্তা করতে সক্ষম হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে ডায়াবিটিস, আলজাইমার এবং ডিমেনশিয়া হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
পরিপূর্ণ ঘুম হওয়া জরুরি: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়স্কদের ঘুমের সমস্যা দেখা যায়। এই বয়সে ঘুমের অভাবে হার্ট ও মস্তিষ্ক সংক্রান্ত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শেই ঘুমের ওষুধ খান এবং সম্ভব হলে শরীরচর্চা করুন, যোগব্যায়াম করুন, ধ্যান করুন, গান শুনুন, হাঁটাহাঁটি করুন।
সামাজিক বন্ধ করা উচিত নয়: একটি ভালো সামাজিক জীবন বয়স্কদের মানসিক, শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ভালো প্রভাব ফেলে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, সামাজিক ব্যস্ততা বয়স্কদের ইতিবাচক মেজাজ বজায় রাখে। যেমন, পার্কে বয়স্ক মানুষের দল তৈরি, সমবয়সীদের সঙ্গে তাস খেলা, খবরের কাগজ পড়ার সময় আলোচনা করা। এর সঙ্গে যা হয় তা হল প্রবীণরা নিজেদের সক্রিয় রাখতে অনুপ্রাণিত হয়। যেখানে একাকিত্ব বয়স্কদের স্বাস্থ্যের উপর অনেক প্রভাব ফেলে। অতএব, অবসর নেওয়ার পরেও, আপনার সামাজিক জীবন বজায় রাখুন, যাতে আপনি এটিকে পরেও এগিয়ে নিতে পারেন।
সুষম খাদ্য জরুরি: বয়স্কদের গুরুতর রোগের ঝুঁকি কমাতে তাদের সুষম খাদ্য দিতে হবে। তার মানে তাঁদের খাবার যেন খুব বেশি ভারী না হয়, তাতে কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট আইটেম (ঘি-তেল-মাখন-বিস্কুট-মাংস) এবং ফাইবার সমৃদ্ধ আইটেমের পরিমাণ বেশি হওয়া উচিত। তাঁদের পরিপাকতন্ত্র যেন সুস্থ থাকে। বয়স্ক ব্যক্তিদের তাজা খাবার খেতে হবে এবং বেশি করে জল ও তরল পান করতে হবে। বয়স্কদের উপযুক্ত পরিমাণে ফল, সবজি এবং গোটা শস্য দিতে হবে।
জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে: যদি বাড়িতে বয়স্করা থাকেন, তাহলে তাঁদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোনও জরুরি অবস্থা মোকাবেলার জন্য একটি পরিকল্পনা করা গুরুত্বপূর্ণ। ঘরে অক্সিমিটার, বিপি মেশিন, সুগার টেস্টিং মেশিন, নেবুলাইজার, থার্মোমিটার ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকতে হবে। ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, নিয়মিত আপনার রক্তচাপ এবং সুগার পরীক্ষা করাতে থাকুন। জরুরি পরিস্থিতিতে কী করতে হবে তার জন্য প্রস্তুত থাকুন, যাতে সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।