উত্তাল সত্তরের দশক। দেশের অর্থনীতির অবস্থা মোটেই ভালো নয়। যুবসমাজের মধ্যে হতাশা, রাগ সব মিলিয়ে জটিল পরিস্থিতি। সেই সময়ে অভিনয়ের ময়দানের উত্তীর্ণ হলেন অমিতাভ বচ্চন। বাকিটা আর বলতে হবে না, ভারতের সিনেমার ইতিহাস বলবে।
কিন্তু বাস্তবের জীবনে কি গড়পড়তা ভারতীয়রা সত্তরের সেই তরুণ তুর্কি অমিতাভ বচ্চনের মতো হতে পারছে? প্রতিবাদ করে কি সফল হতে পারছে? সংখ্যাতত্ত্ব কিন্তু সেই কথা বলছে না। ভারতের মানুষ খুশি নন, অনেকেই রেগে আছেন, অনেকের মন খারাপ, কেউ কেউ গুমরে আছেন, আর বাকিরা মান অভিমানের পালায়।
রবিবার বিশ্ব খুশি দিবস, ইংরেজির পোশাকি কেতায় International Day of Happiness।
খুশির সূচকে ভারত খুব একটা ভালো জায়গায় নেই বললেই চলে। একদিকে যখন ফিনল্যান্ডের মতো জনসংখ্যায় পুচকি দেশ দিব্যি হেসে বেড়াচ্ছে তালিকায় সবার উপরে থেকে, ভারত সেখানে রয়েছে ১৩৬ নম্বরে।
এই খুশির সূচকের হিসেবটা কিন্তু নেহাৎ সহজ নয়। বরং নির্ভর করে ছয়টি বিষয়ের উপর।
- দেশের জি ডি পি
- সামাজিক সাহায্য
- গড় আয়ু
- সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা
- মানবিকতা
- দুর্নীতি নিয়ে ভাবনা।
কেন শুধু এই বিষয়গুলো বেছে নেওয়া হবে আর বাকিগুলো নয়— সেগুলো অর্থনীতিবিদ এবং সংখ্যাতত্ত্ববিদরা বলতে পারবেন।
অনেকেই হয়তো কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলবেন। কিন্তু সেটা বুদ্ধিমানের নয়। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার আগেও ভারত যে খুশি সূচকে উপরের দিকে থেকে বিস্তর হাসাহাসি করত— এমনটাও নয়!
ভারতে শিক্ষার মান বেড়েছে, সচ্ছলতাও অনেকটা, অনেক গ্রাম শহর হওয়ার দিকে পা বাড়িয়েছে। আবার সমাজের নারীর অধিকার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকটি আগের চেয়ে ভালো জায়গায় পৌঁছেছে।
কিন্তু সমস্যাও কি নেই বললেই চলে?
বাড়িতে বাড়িতে মুড়ি মুড়কির মতো ট্যাবলেট কেনা হচ্ছে রক্তচাপকে বশ করতে, কিছু মানুষ ধর্ষণের সময়ে বিপদে পড়া মহিলাকে বাঁচাতে না গিয়ে ভিডিয়ো তুলছেন, রিলের পৃথিবীর সোশ্যাল মিডিয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন রানু মণ্ডলকে নিয়ে মজা করে আনন্দ পাচ্ছে আর কিছু মানুষ স্রেফ দুঃখবিলাসী হয়ে তারিফ কুড়িয়ে যাচ্ছেন।
অসুখটি কি তা হলে ‘রাজার অসুখ’ না সবাই ‘উলঙ্গ রাজা’ কবিতার সেই শিশুটির অপেক্ষায় রয়েছে?
সেখানেই বোধহয় আমজনতার খুশির ফর্মুলা লুকিয়ে আছে।