রণবীর ভট্টাচার্য
খাদ্যে বৈষম্য পৃথিবীর এক কঠিন বাস্তব। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে খাদ্য-সমস্যা গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। গৃহযুদ্ধ থেকে আরম্ভ করে খরা কিংবা অনাবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল উৎপাদন পর্যাপ্ত না হওয়া, সর্বোপরি বিশ্ব উষ্ণায়নের বিষয় তো রয়েছেই। প্রথম বিশ্বের দেশে আবার সমস্যা অন্য। ফাস্ট ফুডের বাড়বাড়ন্ত ডেকে এনেছে একগুচ্ছ রোগ আর নতুন সমস্যা। অনেকটাই বেড়েছে লাইফস্টাইল সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যা। এই সব কিছুর মধ্যে আজ বিশ্বে উদ্যাপন হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল নো ডায়েট ডে, অর্থাৎ ডায়েটে বেশি গুরুত্ব নয়, বরং সুস্থ থাকার বাকি উপাদানগুলোর দিকে নজর দেওয়া বড্ড প্রয়োজন।
আধুনিক সমাজে বডি শেমিং দুর্ভাবনায় ফেলার মতো একটি সমস্যা, বিশেষ করে শহর বা টাউনে। রোগা বা মোটা নিয়ে মানুষের চিরকালীন দ্বিধা তো রয়েছেই। নাদিয়া কোমানচির সেই পারফেক্ট টেনের মতো আজকের ছেলেমেয়েরা অনেকেই পারফেক্ট শরীর চায়। চটজলদি রোগা হওয়ার অভিপ্রায়ে অনেকেই রাতারাতি খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেয়, পোশাকি ভাষায় যাকে ক্র্যাশ ডায়েট। এতে বিপদের যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। অতীতে বিদেশে এই ধরনের ডায়েটে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। স্কুল, কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে ওজন বা দৈহিক আকৃতি নিয়ে অনেকেই টিটকিরি বা বুলিংয়ের শিকার হয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, সিনেমার নায়কদের মতো চেহারা বানাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনার উদাহরণ রয়েছে অনেক। স্টেরয়েড বা বিপজ্জনক কিছু ওষুধ দীর্ঘস্থায়ী কুফল ডেকে আনতে পারে যে কারও মধ্যে।
এর সঙ্গে অনেকেই আবার ফুড সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার দিকে এগিয়েছেন। সেখানে রান্না করা খাবার বা টাটকা ফল, সবজি নয়, ওষুধের মতো খাওয়া আর সেগুলোর ভরসাতেই থাকা - কিন্তু আদৌ কি সেগুলো নিরাপদ কোন মানুষের জন্য? অনেকেই কিছুটা ইন্টারনেট ঘেঁষা স্বল্প বিদ্যা বা পরিচিতরা কথায় প্রভাবিত হয়ে এই ধরনের পথে এগোচ্ছেন। অর্গানিক খাবারের দিকে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে ঠিকই কিন্তু জনসংখ্যা অনুযায়ী পরিমাণ অতি নগণ্য বলা চলে।
বেশির ভাগ দেশে ডায়েট ব্যাপারটাই বাতুলতা। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট জাতীয় খাবার ঠিক কতটা কি পরিমাণে খাওয়া উচিত, সেই নিয়ে স্পষ্ট ধারণা হাতেগোনা মানুষের রয়েছে। সামনের দিনে তাই ডায়েট নিয়ে কচকচানি নয়, বরং পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খাওয়ার দিকে নজর দেওয়া ভীষণ দরকার। তার সাথে সাথে শরীরের ওজন, রক্তচাপ, মধুমেহর পরিমাপসহ বাকি দিকগুলো মাথায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।