আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রতি বছর একটি ভিন্ন থিম নিয়ে পালিত হয়। প্রতি বছর ৮ মার্চ পালন করা হয়। সারা বিশ্বে নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অর্জনকে সম্মান জানাতে এই দিনটি ব্যাপকভাবে পালিত হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস একটি বিশ্বব্যাপী ছুটির দিন হিসাবেও পালন করা হয়। দিনটি লিঙ্গ সমতা, প্রজননের অধিকার, নারীদের উপর হিংসা ও নির্যাতন, নারীর সমান অধিকার ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। প্রতিটি নারীকে উদযাপন করার জন্য দিনটি পালন করা হয়।
সমাজে নারীদের গুরুত্ব ও অবদানের কথা মনে করিয়ে দিতেই এই বিশেষ দিনটি পালনের শুরু। রাষ্ট্রসংঘের এবারের থিম প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে লিঙ্গসাম্য তৈরি করা। ইউনাইটেড নেশনসের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তেনিও গুতেরেস বলেন, লিঙ্গসাম্য একদিকে যেমন মানুষের মৌলিক অধিকারগুলি সুনিশ্চিত করে, তেমনই আরেকদিকে পৃথিবীর অনেক খুঁটিনাটি সমস্যারও সমাধান করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানুষের এই মৌলিক অধিকারই সুনিশ্চিত নয়। মৌলিক অধিকারের ক্ষতিসাধন করে পৃথিবীর কল্যাণের ক্ষতি করা হচ্ছে।’
কীভাবে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন?
এর উত্তর জানতে হলে প্রায় এক শতাব্দী পিছিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সংক্ষেপে আইডব্লিউডি বলা হয়ে থাকে। শ্রমিক আন্দোলন থেকেই উদ্ভূত হয় নারী দিবসের ধারণা। পরবর্তীতে দিনটি জাতিসংঘের স্বীকৃত পায় এবং প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হতে থাকে। আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি প্রথম ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নারী দিবস পালন করার কথা বলে। থেরেসা মালকিয়েল এই দিন বস্ত্র ব্যবসায়ীদের কথা স্মরণ করতেই এই বিশেষ দিন পালনের কথা বলেন। এরপরেই আমেরিকানদের থেকে উৎসাহিত হয়ে জার্মান সরকারের তরফে একটি দিন নারী দিবস হিসেবে পালনের কথা বলা হয়। যদিও এর জন্য কোনও তারিখ ঠিক করা হয়নি তখনও।
এরপর ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কংগ্ৰেসেনারী অধিকার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ক্লারা জেটকিন একটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের কথা বলেন। সেখানেই উপস্থিত ১৭জন মহিলা সদস্য তাঁকে সমর্থন জানান। ওঁদের মধ্যে ফিনল্যান্ডের প্রথম তিন সংসদীয় সদস্যও ছিলেন। মার্চেই এই দিনটির প্রাথমিক অনুষ্ঠান করা হয়। পরে ১৯১৩ সালে ৮ মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রসংঘ এই দিনটির বিশেষ থিম নির্বাচন করে। প্রথম থিম ছিল ‘অতীতের উদযাপন ও ভবিষ্যতের প্রস্তুতি’। এই থিমটি ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রসংঘেই প্রথম উদযাপিত হয়। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চ পালন করা হয়। তখন থেকেই প্রতি বছর একটি বিশেষ থিম বা ভাবনা নিয়ে পালন করা হয় নারীদের এই দিনটি।
তবে এখানেও রয়েছে একটি তর্ক। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি যখন ক্লারা উত্থাপন করেন, তখন তিনি নির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের আগ পর্যন্ত দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট করা যায়নি বলেই উল্লেখ রয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। একই বছর রুশ নারীরা 'রুটি এবং শান্তি'-এর দাবিতে তৎকালীন জারের (রাশিয়ার সম্রাট) বিরুদ্ধে ধর্মঘট শুরু করেন; এর ৪ দিনের মাথায় গদি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল জার এবং জারের গদিতে বসা অস্থায়ী সরকার তখন নারীদের আনুষ্ঠানিক ভোটাধিকার দিয়েছিলেন।
সে সময়ে রাশিয়ায় প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, নারীদের ধর্মঘট শুরু হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি, রোববার। আর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এই দিনটি ছিল ৮ মার্চ; পরবর্তীতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৮ মার্চকেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।