যদি আপনার সন্তান কারও সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে, তাহলে এটি কেবল তার লজ্জার লক্ষণই নয় বরং সামাজিক উদ্বেগেরও লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের শিশুরা ভিড়ের মধ্যে অস্বস্তি বোধ করে, প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে চলা এবং অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলা তাদের জন্য পাহাড়ে ওঠার মতো।
কিন্তু চিন্তা করবেন না, মনোবিজ্ঞান এবং শিশু আচরণ বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে একটু বোঝাপড়া এবং সঠিক নির্দেশনা পেলে শিশুদের এই দ্বিধা ধীরে ধীরে দূর করা সম্ভব। এই প্রতিবেদনে, আমরা আপনাকে লাজুক শিশুদের মুখ খুলতে সাহায্য করার সহজ টিপস বলতে যাচ্ছি, যা বাবা-মায়েরা বাড়িতে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
১. লজ্জা এবং ভয়ের মধ্যে পার্থক্য জানুন
সব শিশুই লাজুক হয় না। কিছু শিশু যে কোনও নতুন পরিবেশে নার্ভাস বোধ করে, বিশেষ করে যখন আশেপাশে নতুন মানুষ থাকে। যদি আপনার সন্তান প্রতিবার নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা করার সময় নিজেকে গুটিয়ে নেয়, তাহলে এটি একটি লক্ষণ যে সে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় ভয় পায়। তার এই স্বভাবকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং গ্রহণ করা হল প্রথম পদক্ষেপ।
২. ধীরে ধীরে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ান
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ছোট ছোট কাজে সফল হলে শিশুদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। যেমন অতিথিকে জল খাওয়ানো, দোকান থেকে কিছু কেনা বা স্কুলে কোনও বিশেষ প্রজেক্ট করা। যখন বাবা-মায়েরা শিশুদের এই ধরনের সুযোগ দেন, তখন তারা ধীরে ধীরে কথা বলতে এবং মানুষের সঙ্গে দেখা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
৩. তুলনা না করে সমর্থন করুন
প্রায়শই দেখা যায় যে বাবা-মায়েরা সন্তানকে অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। এই ধরনের তুলনা শিশুর দ্বিধাকে আরও গভীর করে তোলে। তাই বিশেষজ্ঞরা শিশুদের তাদের নিজস্ব গতিতে বেড়ে উঠতে দেওয়ার এবং তাদের বিচার না করে সমর্থন করার পরামর্শ দেন।
শিশুদের দ্বিধা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দেওয়া সহজ টিপস
প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট একা আপনার সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। তাকে তার স্কুল, বন্ধুবান্ধব, অথবা তার প্রিয় খেলনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন। শিশু যখন খোলামেলা কথা বলতে শুরু করবে, তখন তার দ্বিধাও কমে যাবে।
বাড়িতে 'দোকানদার এবং গ্রাহক' অথবা ইন্টারভিউ নেওয়ার মতো রোল প্লে গেম খেলুন। এটি আপনার সন্তানকে কথোপকথনের অনুশীলন করতে সাহায্য করবে এবং তাঁকে দেখাবে যে কথোপকথন মজাদার হতে পারে।
যদি শিশুটি কোনও নতুন ব্যক্তিকে অভ্যর্থনা জানায় বা কোনও প্রশ্নের উত্তর দেয়, তাহলে অবশ্যই তার প্রশংসা করুন। এতে সে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাবে এবং সে পরের বার আরও ভালো করার চেষ্টা করবে।
লাজুক বাচ্চাদের নির্দেশনা প্রয়োজন, জোরজবরদস্তি নয়
প্রতিটি শিশুই আলাদা। কিছু শিশু জন্ম থেকেই বেশি সামাজিক হয়, আবার কিছু শিশু খোলামেলা হতে সময় নেয়। বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানকে বোঝা, তার অনুভূতিকে সম্মান করা এবং জোর না করা গুরুত্বপূর্ণ। শিশু যখন নিরাপদ বোধ করে, তখনই সে ধীরে ধীরে মুখ খুলতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা আরও বিশ্বাস করেন যে দ্বিধা কোনও ত্রুটি নয়, বরং একটি আচরণগত পর্যায়, যা সঠিক নির্দেশনা এবং ভালোবাসা দিয়ে পরিবর্তন করা যেতে পারে।