Iscon History:বাংলাদেশে একের পর এক বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ইসকনের সেন্টার। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্ব জুড়েই লক্ষ লক্ষ ভক্ত রয়েছে ইসকনের। এমন বিপাকের পরিস্থিতি বর্তমানে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কিন্তু কীভাবে শুরু হয়েছিল ইসকনের পথচলা। কে প্রতিষ্ঠা করেন ইসকন? জেনে নেওয়া যাক ইসকনের ইতিহাস।
ইসকনের অর্থ
প্রথমেই বলে নেওয়া যাক ইসকনের পুরো নাম। এটি কয়েকটি ইংরেজি শব্দের আদ্যক্ষর নিয়ে তৈরি। ইসকনের পুরো নাম ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস। ১৯৬৬ সালে ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই আন্তর্জাতিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠা করেন।
ইসকনের ইতিহাস
ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের জন্মস্থান কলকাতা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একনিষ্ঠ ভক্ত প্রভুপাদ সবসময় কৃষ্ণের নামগানে মগ্ন থাকতেন। কৃষ্ণভক্তির বশেই তিনি গৌড়ীয় নথি লিখতে শুরু করেছিলেন। পরে এই কাজ করতে করতেই গভীর প্রভাব পড়ে তাঁর মননে। একটি নতুন প্রকারের ভক্তি আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। সেখান থেকেই ইসকনের ধারণা জন্ম নেয় বলে অনুমান অনেকের।
স্বামী প্রভুপাদের আন্দোলন
স্বামী প্রভুপাদের আন্দোলন অবশ্য শুরু হয়েছিল বিদেশ থেকে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে ইসকন প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে স্বামী প্রভুপাদ হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের সূচনাও করেন। কৃষ্ণভক্তিতে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে বহু বিদেশি নারী-পুরুষ তাঁর সঙ্গে এই আন্দোলনে যোগ দেন। আজ ভারতের আনাচেকানাচে এত বিদেশি কৃষ্ণভক্তরা পরিলক্ষিত হন, তার একটি বড় কারণ কিন্তু ইসকন।
আরও পড়ুন - ছয় মাসেও শেষ হবে না গ্যাস! রান্নার সময় করুন এই কাজগুলি
ইসকন প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
ইসকন প্রতিষ্ঠার কাজ মোটেই সহজ ছিল না। সন্ন্যাস গ্রহণের পর স্বামী প্রভুপাদ হরে কৃষ্ণ আন্দোলন প্রচার করতে শুরু করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রথমে বেশ কিছু দিন বিভিন্ন স্থানে তাঁকে বক্তৃতা দিতে হয়। এরপর ধীরে ধীরে অর্থসংগ্রহের মাধ্যমে ইসকনের প্রতিষ্ঠা হয়। প্রাথমিকভাবে সমাজ থেকে বহিষ্কৃত আমেরিকানদের নিয়েই শুরু হয়েছিল ইসকনের পথচলা। এদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিপি বলা হত। তাদের ভাগবত গীতার অর্থ ব্যাখ্যা করে বোঝানো হয়। এভাবেই ইসকনের অনুরাগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে সারা বিশ্বে ইসকনের ১০০টির বেশি কেন্দ্র রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানেও ইসকনের সেন্টার হয়েছে। মোট ১২টি সেন্টার রয়েছে পাকিস্তানে।
ইসকনের লক্ষ্য
শ্রীকৃষ্ণের বাণী প্রচারের মাধ্যমে অহিংসা ও ভক্তির চর্চাই ইসকনের মূল উদ্দেশ্য। ভগবানের কাছে পৌঁছাতে মানুষকে ভালোবাসার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে যেতে হয়। এই বিশ্বাস নিয়েই ইসকনের সকল কর্ম সাধিত হয়। তবে মূল লক্ষ্যের জন্য সাধনভজনের পাশাপাশি কিছু আচারও মেনে চলেন ইসকনের অনুগামীরা। তামসিক খাদ্য না খাওয়া, সন্ন্যাসের জীবনযাপনের অঙ্গীকার করতে হয় তাঁদের।
আরও পড়ুন - ক্যানসার সারাবে আগাছার রস! বাঙালি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় তোলপাড় দুনিয়া
ইসকন অনুগামীদের জীবনযাপন
ইসকন অনুগামীদের খাওয়াদাওয়া জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নানা আচার মেনে চলার রীতি রয়েছে। যেমন তামসিক খাদ্যবস্তু অর্থাৎ মাছ,মাংস, পেঁয়াজ, রসুন, মদ ইত্যাদি তাঁদের এড়িয়ে চলাই রেওয়াজ। দিনে কমপক্ষে ১৬বার কৃষ্ণনাম জপ করার রীতি রয়েছে ইসকন অনুগামীদের। এছাড়াও, গীতাপাঠে নিয়োজিত থাকতে হয়। ভারতের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, পুরাণ, ইতিহাস পড়ার রেওয়াজও রয়েছে। কোনও রকম অন্যায় করা বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখার রীতি প্রচলিত রয়েছে ইসকন অনুগামীদের মধ্যে।
ইসকনের কেন্দ্র
ভারতে ইসকনের ৪০০টিরও বেশি কেন্দ্র রয়েছে। ভারতে প্রথম কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বৃন্দাবনে। শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্রে। ওই ইসকন সেন্টারটি কৃষ্ণ-বলরাম মন্দির নামেও পরিচিত। ১৯৭৫ সালে এটির নির্মাণ হয়। এখানে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী উদযাপনের পদ্ধতি অন্যান্য স্থানের থেকে আলাদা। এছাড়াও, অনেকগুলি নিরামিষ রেঁস্তরা ইসকন পরিচালনা করে। ১০০টিরও বেশি নিরামিষ হোটেল রয়েছে ইসকনের।