শুক্রবার রাত থেকে নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি অডিয় রেকর্ডিং। বেসরকারি এক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকের সঙ্গে কবীর সুমনের টেলিফোনে কথোপকথন। শোনা যায়, সাংবাদিককে গালিগালাজ করছেন কবীর সুমন। তার পর থেকেই এই বিষয়ে নানা প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বহু সাধারণ মানুষ থেকে নামজাদা ব্যক্তিত্ব— অনেকেই কবীর সুমনের এই আচরণের সমালোচনা করেছেন। এই তালিকায় রয়েছেন কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
ফেসবুকে শ্রীজাত লেখেন, ‘বাকি দুনিয়ায় শিল্পীদের জন্য কিছু ছাড় থাকলেও, তাঁদের শত অন্যায়কে শিল্পের দোহাই দিয়ে অদেখা করার অলিখিত চুক্তি নেই। পশ্চিমে তো প্রশ্নই ওঠে না। সোজা ঘাড় ধরে কাঠগড়ায় তুলে দেবে, বাকি কথা তারপর। সে তুমি যত বড় শিল্পস্রষ্টাই হও, নিয়ম তোমার জন্যেও একই।’
এর পরে তিনি লেখেন, ‘ধারাবাহিক পরিকল্পিত অসভ্যতার প্রত্যেকটির পরে বুক বাজিয়ে বলতে পারেন, বেশ করেছি। কেননা তিনি জানেন, আমরা দুর্বল। আমরা কেউ একজনও ঘুরে দাঁড়িয়ে বলব না, মোটেই বেশ করেননি, অন্যায় করেছেন। ক্ষমা চান। কাউকে অপমান করবার অধিকার আপনাকে শিল্প দেয়নি।’ এই পর্যন্ত অবশ্য তিনি কবীর সুমনের নাম লেখেননি। লিখেছেন, ‘কেউ যদি আমার বিরোধীও হন, তাঁর প্রস্তাবে আমি যদি অসম্মতও হই, তবে তা প্রত্যাখ্যানেরও দস্তুর আছে। এমনকী অপ্রাসঙ্গিক থাকতে থাকতে হতাশ হয়ে হেডলাইন হয়ে ওঠার তীব্র খিদে থেকেও তাঁকে অসম্মান করার, অসাংবিধানিক ভাষায় গরগরে আক্রমণ করার অধিকার আমার নেই।’
এর পরেই তিনি লেখেন, ‘এই আমি পা নামিয়ে রাখলাম। আই পুট মাই ফুট ডাউন। টাকা খরচ ক’রে টিকিট আর ক্যাসেট কিনেছি। সত্তা বা চেতনা খরচ করে নয়।’
শেষে গিয়ে তিনি টেনে আনেন কবীর সুমনের প্রসঙ্গে। লেখেন, ‘মনে আছে, কবীর সুমন নিজের একখানা গানে লিখেছিলেন, বিরোধীকে বলতে দাও, বিরোধীকে বলতে দাও, তোমার ভুলের ফর্দ দিক। বাঙালি বোধহয় শুনেও এসব গানের অর্থ উপলব্ধি করতে পারেনি। পারলে আজ তার এই হাঁড়ির হাল হতো না। আরেকটি গানের প্রথম লাইন মনে পড়ে যাচ্ছে, এর উত্তর হিসেবে। তুমি গান গাইলে, বিশেষ কিছুই হলো না, যা ছিল আগের মতো রয়ে গেল। বিস্ময়কর ভাবে, এ-গানও সুমনেরই রচনা। কী মিষ্টি সমাপতন, না?’