সব স্বামী স্ত্রীর মধ্যেই যেমন দাম্পত্য কলহ হয়, ঠিক তেমনই একবার মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছিল মা সতী এবং মহাদেবের মধ্যে। এই দাম্পত্য কলহ থেকেই তৈরি হয়েছিল দশমহাবিদ্যা। এই দশমহাবিদ্যার ১০ রূপ কী কী? মা সতীর ১০ রূপের বিবরণ জানুন এই প্রতিবেদনে।
পুরাণ কাহিনী অনুযায়ী, পিতার বিরুদ্ধে গিয়ে মহাদেবকে বিবাহ করেছিলেন মাতা পার্বতী। মহাদেবকে অবজ্ঞা করার জন্য মা সতীর পিতা দক্ষ একটি মহাযজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন, যেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন না মাতা পার্বতী ও মহাদেব। কিন্তু নারদের মুখে যজ্ঞের কথা শুনে বিনা আমন্ত্রণেই বাপের বাড়ি যেতে চাইলেন পার্বতী, যাতে বাধ সাধেন মহাদেব।
স্বামীর অনুমতি না পাওয়ায় রেগে গিয়ে মা সতী শ্যামায় রূপান্তরিত হন। মায়ের এই ভয়ংকর রূপ দেখে শিব সেখান থেকে পালাতে চাইলে মা সতী ১০ মহাবিদ্যা-র রূপ ধারণ করে শিবকে দশদিক দিয়ে ঘিরে ফেলেন। মায়ের এই রূপ দেখে অবশেষে বাধ্য হয়ে শিব মাকে বাপের বাড়ি যেতে অনুমতি দেন। সতীর এই ১০ ভিন্ন রূপকে একসঙ্গে বলা হয় দশমহাবিদ্যা।
(আরও পড়ুন: মায়ের গলা জড়িয়ে ইহলোক ছাড়েন সাধক রামপ্রসাদ! গান শুনতে এসেছিলেন এই দেবীও)
দশমহাবিদ্যার দশ রূপ কী কী?
দশমহাবিদ্যার প্রথম রূপ কালী। কালী অথবা শ্যামা অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রতীক।
দ্বিতীয় রূপ মা তারিণী। বিশ্বের সমস্ত শক্তি এবং মহাশূন্যের প্রতীক তিনি। মা কালী যদি ধ্বংসের প্রতিমূর্তি হন তাহলে মা তারিনী রক্ষকের প্রতিমূর্তি।
দশমহাবিদ্যার তৃতীয় রূপ ষোড়শী অথবা ত্রিপুরসুন্দরী। তাঁর রূপ স্নিগ্ধ। তাঁর হাতে থাকে তীর,ধনুক, অঙ্কুশ এবং পদ্ম।
চতুর্থ রূপ ভুবনেশ্বরী। তাঁর পরনে থাকে রক্তাভ বস্ত্র। সারা বিশ্বের জননী তিনি। তিনি যে সিংহাসনে বসে থাকেন, সেটি অন্য সিংহাসনের থেকে একেবারেই আলাদা।
পঞ্চম রূপের নাম দেবী ভৈরবী। লাল বস্ত্র পরিহিত এই দেবীর হাঁটু অব্দি বিস্তৃত খোলা চুল। নরমুন্ড, বিষধর সাপ সজ্জিত এই দেবী।
মাতা সতীর ষষ্ঠ রূপ ছিন্নমস্তা। এক হাতে নিজের কাটা মুন্ডু, অন্য হাতে খড়গ, দেবীর এই রূপ সত্যিই ভয়াল।
(আরও পড়ুন: ১৪ শাক খেয়ে ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর দিন আজ, সকলকে জানান ভূত চতুর্দশীর শুভেচ্ছা)
দশমহাবিদ্যার সপ্তম রূপ ধূমাবতী। সাদা শাড়ি পরিহিত দেবী সব সময় থাকেন বাহন বিহীন রথে। রথের মাথায় দেখা যায় একটি কাকের মূর্তি ও পতাকা।
দেবীর অষ্টম রূপ বগলামুখী। দেবীর এক হাতে ধরা থাকে গদা, অন্য হাতে মন্দাসুর দৈত্যের কাটা মুন্ডু।
নবম রূপ মাতঙ্গী শান্তির মূর্তি। দেবীর এক হাতে থাকে তলোয়ার, অন্যহাটি থাকে বীণা। তৃতীয় হাতে করোটি, চতুর্থ হাতে আশীর্বাদ। এই রূপকে তান্ত্রিক সরস্বতীও বলা হয়।
দশমহাবিদ্যার শেষ রূপ কমলা। দেবীর চার হাতের দুটির মধ্যে ধরা থাকে পদ্ম, বাকি দুটিতে অভয়মুদ্রা। এই রূপ তান্ত্রিক লক্ষ্মী নামেও পরিচিত।