বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুল সম্পর্কিত নানা সমস্যাও দেখা দিতে শুরু করে। খুশকি বৃদ্ধি পায়, মাথার ত্বক আঠালো হয়ে যায় এবং চুল পড়াও বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুল পড়ার সমস্যা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সাধারণত প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি চুল পড়ে গেলেও, বর্ষাকালে এই সংখ্যা ২৫০ বা তারও বেশি হয়ে যায়। তাই আবহাওয়া অনুসারে চুলের যত্নের রুটিন পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
লাইভ হিন্দুস্তানকে বিনু দেহিনওয়াল জানান, বর্ষাকালে আর্দ্রতা বেশি থাকে, তাই সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলি বেশি তেল উৎপন্ন করে। এই তেলকে সিবাম বলে। সিবামের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে মাথার ত্বক আঠালো থাকে এবং ধুলো ও ময়লা বেশি জমতে থাকে। এছাড়াও, এই ঋতুতে কোলাজেন ফাইবারও শক্ত হতে শুরু করে। এই ফাইবারগুলি আমাদের চুলের গোড়া ধরে রাখে। আবহাওয়ার কারণে শক্ত হয়ে যাওয়া চুলকে গোড়া থেকে দুর্বল করে দেয়, ফলস্বরূপ চুল স্পর্শ করলেই ভেঙে যেতে শুরু করে।
বর্ষাকালে চুল ভিজে যাওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু ভেজা চুল না শুকালে হবে না। চুল বেশিক্ষণ ভেজা রাখলে চুল ভেঙে যেতে পারে। চুল শুকানোর জন্য মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। ভেজা চুল আঁচড়িয়ে রাখবেন না। ভেজা চুলে তোয়ালেও জড়িয়ে রাখবেন না এতে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। তবে হেয়ার ড্রায়ারও ব্যবহার করবেন না। এটা করলে দুর্বল চুল আরও দুর্বল হয়ে যাবে।
রাসায়নিক চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই এই সময় যে কোনও হেয়ার ট্রিটমেন্ট না করানোই ভালো। চুলে রঙ করা, কোঁকড়ানো বা কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করিয়ে চুল স্ট্রেট করা ইত্যাদি চুলকে তৈলাক্ত করে তোলে, যা চুলের সঙ্গে সঙ্গে মাথার ত্বকেরও ক্ষতি করে। এই ঋতুতে হেয়ার স্প্রে এবং জেল ইত্যাদির ব্যবহার এড়িয়ে চলাই ভালো। হেয়ার স্ট্রেইটনার, হেয়ার কার্লার বর্ষাকালে চুলের ক্ষতি করতে পারে।
বর্ষাকালে চুল পড়া কমাতে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। ডায়েট কনসালট্যান্ট ডঃ ভারতী দীক্ষিত জানান যে, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খাদ্যতালিকায় বায়োটিন, আয়রন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি, জিঙ্ক ইত্যাদি পুষ্টির পরিমাণ বাড়াতে হবে। এর জন্য খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরণের ডাল এবং মটরশুটি ইত্যাদি রাখতে হবে। এগুলি সবই ফলিক অ্যাসিড, প্রোটিন এবং জিঙ্কের ভালো উৎস। মিষ্টি আলু বিটা-ক্যারোটিন এবং ভিটামিন-এ-এর জন্যও খুব ভালো। মেথির বীজ চুলের জন্যও উপকারী। বর্ষাকালে চুল পড়া কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। এছাড়াও চা-কফি কম খেতে হবে। এতে শরীরের পাশাপাশি মাথার ত্বকেও প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা থাকবে।
এই ঋতুতে চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য দইয়ের মাস্ক লাগাতে পারেন। এতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে, যা মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে এবং প্রয়োজনীয় আর্দ্রতাও সরবরাহ করবে। মাথার ত্বককে আর্দ্র রাখার জন্য তিসির বীজের হেয়ার প্যাকও তৈরি করতে পারেন।
বর্ষায় চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য, নারকেল তেলে, আমলকী, ভৃঙ্গরাজ এবং শিকাকাই গুঁড়ো মিশিয়ে একটি হেয়ার মাস্কও তৈরি করতে পারেন। এটা আধ থেকে এক ঘন্টা মাথার ত্বকে লাগান এবং তারপর শ্যাম্পু করুন।
মাথার ত্বকে অ্যালোভেরা জেল লাগাতে পারেন। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। শ্যাম্পু করার দুই ঘন্টা আগে এটা মাথার ত্বকে লাগান। আপনি এই জেলটি তেল এবং শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
চুল শুষ্ক এবং প্রাণহীন হয়ে পড়লে কলা এবং মধুর একটি প্যাক চুলে ৫০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। মেথির প্যাকও তৈরি করতে পারেন। এর জন্য তিন টেবিল চামচ ভেজানো মেথি বীজ, মুলতানি মাটি, ছয়টি পুদিনা পাতা এবং অর্ধেক লেবু লাগবে। আপনি এটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করতে পারেন।