সুস্থ থাকার জন্য আমরা এখন নিয়মিত ব্যায়াম করছি। সুষম আহার গ্রহণ করে স্বাস্থ্য ভালো রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু এ সবের মাঝে সুস্থ থাকার ছোট্ট একটি বিষয়কে উপেক্ষা করে যাচ্ছি। ছোট্ট হলেও এটি সুস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি হল সঠিক পদ্ধতিতে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ। আমরা খাবার খেতে ভুলে যাই, কিন্তু শ্বাস গ্রহণ করতে ভুলি না।
সারাদিনের দৌড়ঝাপ, ব্যস্ততার কারণে মানসিক ও শারীরিক উভয় ভাবেই হাঁপিয়ে উঠি। আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস হাল্কা হয়ে যায় এবং গতি বেড়ে যায়। উল্লেখ্য, শ্বাসপ্রশ্বাস অগভীর বা হাল্কা হয়ে পড়লে ব্যক্তি চাপমুক্ত হতে পারে না। যা নানান শারীরিক সমস্যার মুখে ফেলে দিতে পারে।
প্রাণায়াম এমন একটি প্রাচীন যোগাভ্যাস, যা ব্যক্তির শ্বাসপ্রশ্বাস উন্নত ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ভ্রামরী, কপালভাতি, নাড়ীশোধন, উজ্জয়ী, ভাস্তৃকার মতো প্রাণায়াম কৌশল আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে, অবসাদ ও চাপ মুক্ত হতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনের জোগান সম্ভব হয়।
প্রতিদিন প্রাণায়াম করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, এই প্রক্রিয়া ব্যক্তিকে শান্ত রাখে এবং শরীর ডিটক্সিফাই করে।
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ড: দীক্ষা ভাবসার বলেন যে, ‘প্রাণায়ামের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পুষ্টিকর উপাদান পৌঁছে দেয়, চিন্তামুক্ত করে এবং মন শান্ত রাখে। এই সমস্ত স্বাস্থ্য উপকারিতা লাভের জন্য প্রতিদিন প্রাণায়াম অভ্যাস করা উচিত।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক ভাবে গৃহীত গভীর নিঃশ্বাস আপনার কর্টিসোলের স্তর তৎক্ষণাৎ (কম কর্টিসোল= কম স্ট্রেস) কমিয়ে দিতে পারে। একবার সঠিক শ্বাসপ্রশ্বাসের ফলে এমন ফলাফল লাভ করলে, প্রতিদিন যদি প্রাণায়াম করেন, তা হলে কী কী উপকারিতা লাভ করতে পারেন, তা নিজেই ভেবে দেখুন।
প্রাণায়ামের উপকারিতা
১. রাগ কম করে।
২. ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্যে করে। অতএব আপনার ওয়েটলস জার্নির প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে প্রাণায়াম।
৩. প্রাণায়াম ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও পেশাগত সম্পর্ককেও উন্নত করে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের ফলে ব্যক্তি নিজের মেজাজের ওপরও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। এর ফলে তাঁরা সকলের সঙ্গে ভালো ভাবে মেলামেশা করতে পারে।
৪. কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৬. প্রাণায়াম ব্যক্তির অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
৭. ঘুমের সময় ও গুণমান বৃদ্ধি করে প্রাণায়াম।
৮. ক্রনিক ইনফ্লেমেশান কম করে।
৯. মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন প্রাণায়াম করা উচিত।
১০. সঠিক ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস করলে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে। এর ফলে ব্যক্তি উৎসাহ ও শক্তিতে ভরপুর থাকে।
১১. শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ার ফলে আমাদের শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং কার্বোন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।